Saturday, November 16, 2013

সাইকেল হেলিকপ্টার এখন গল্প মাত্র

হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ে। অনেকে মনে করতে পারেন সাইকেল হেলিকপ্টার হয়তো আকাশ পথের কোন যানবাহন। কিন্তু বাস্তবে আকাশ পথের নয়, এটি স্থল পথের একটি যানবাহন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক সময়ের জনপ্রিয় পরিবহন এই সাইকেল হেলিকপ্টার। আকাশ পথের হেলিকপ্টারে যেমন এক স্থান থেকে দ্রুত অন্য স্থানে যাওয়া যায় তেমনি দ্রুত না হলেও দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার একমাত্র সহজলভ্য ও জনপ্রিয় পরিবহন ছিল সাইকেল হেলিকপ্টার।

সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে গদি বা নরম কিছু স্থাপন করে একজন মানুষ বহনের ব্যবস্থাই মূলত সাইকেল হেলিকপ্টারের কাজ। পেছনের ক্যারিয়ারে যাত্রী বহন করা হয় না। বিশেষ ব্যবস্থায় সামনের রডে আরো একজন যাত্রী বহন করা হয়।

১৯৬৮-৬৯ সালের দিকে এই পরিবহনের সূত্রপাত হয়। এই অঞ্চলে সাইকেল হেলিকপ্টার অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১০ হাজারের বেশি লোক হেলিকপ্টার চালনার পেশায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। হাটবাজার, গুরুত্বপূর্ণস্থান, রাস্তার মোড়, সর্বত্র হেলিকপ্টার চালকের আনাগোনা ছিল। কিন্তু সেদিন আর নেই। সাইকেল হেলিকপ্টার এখন আর দেখা যায় না।

বিগত কয়েক দশকে এ অঞ্চলের রাস্তাঘাটের বেশ উন্নতি হয়েছে। মোটর সাইকেল হেলিকপ্টার, বাস, টেম্পু, ইঞ্চিন চালিত ভ্যানগাড়ি প্রভৃতির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ সমস্ত যানবাহনের সাথে টিকে থাকতে না পেরে সাইকেল হেলিকপ্টার চালকেরা অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।

সম্প্রতি সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর জেলার অধিকাংশ রুট ঘুরে হাতেগোনা কয়েকটি হেলিকপ্টার বাইসাইকেল দেখা গেছে। সাতক্ষীরার বিনের পোতা ও পাটকেলঘাটায় ২ খানা করে, যশোরের কেশবপুরে ১ খানা ও খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়ায় ৩ খানা হেলিকপ্টার দেখা গেছে। এগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। সারাদিন অপেক্ষা করেও যাত্রী পায় না।

পাটকেল ঘাটার ব্রিজে এলাকায় এক দোকানদারের সাথে কথা হলে তিনি জানান পাঁচ সাত বছর আগেও এখানে নিচে সব সময়ের জন্য ২৫ থেকে ৩০ খানা বাইসাইকেল হেলিকপ্টার থাকত। এখন ২/৪ খানা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর যা দেখা যায় তাও যাত্রী পায় না।

তালা উপজেলার শ্রীমন্তকাটি গ্রামের নির্মল সাধু বলেন, ‘আমি সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে হেলিকপ্টার চালিয়ে আসছি। আগে ১০০ টাকার নিচে কোন দিন আয় করিনি। বেশ সংসার চলতো। গত ১০ বছর ধরে ভাটা চলছে। এমন ও সময় ছিল যাত্রীরা দু এক দিন আগে বুকিং করে যেত। আর এখন অনুরোধ করলেও যাত্রীরা যেতে রাজি হয় না।’

শালিকার মোড়ে আনার বিশ্বাস নামের একজন জানান, তিনি এখন সাইকেল হেলিকপ্টার নিয়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করেন। তবে যাত্রী পান না। প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এ পেশায় আছি। যাত্রী পায় না। তবু ও পুরানো পেশা ছাড়তেও পারি না।