Saturday, March 29, 2014

যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থা; পাইকগাছার সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত

সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে পাইকগাছা উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জেলা শহর খুলনা তথা সারা দেশের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ‘সড়ক ও নৌ’ এ দু’টি পথই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে প্রায়। অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলো অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় আর কোনভাবেই উদ্ধার করে তার গতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়ে উঠছে না। 

অন্যদিকে খুলনা-পাইকগাছা-কয়রা একমাত্র রাস্তাটির অবস্থাও খুবই নাজুক। আঠারমাইল থেকে পাইকগাছা হয়ে কয়রা প্রায় ৬৫ কিলোমিটার রাস্তার বেশিরভাগ অংশ ভাঙ্গা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হবার কারনে এর প্রভাবটা গিয়ে পড়ছে পাইকগাছা-কয়রার সর্বক্ষেত্রে।

জানা গেছে, নৌপথে কয়রায় সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও কিছুটা সচল রয়েছে, তবে পাইকগাছার সাথে নৌ যোগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে বললেও ভুল হবে না। যেটুকু নৌপথ সচল রয়েছে তার উপরও লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে ভূমিদস্যুদের।

অত্র অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য তিনটি মোকামের মধ্যে কপিলমুনি মোকামে নৌপথে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। কপিলমুনি বাজারের গাঁঘেষা কপোতাক্ষ নদ শুকিয়ে যাবার পাশাপাশি ভূমিদস্যুরা এর চরভরাটী সম্পূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছে। চাঁদখালী ও বড়দল মোকামে নৌপথে যাওয়া-আসার দু’টি পথের একটি কাটাখালী নদীটি সম্পূর্ণ দখল করে নেয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

আশাশুনি-পাইকগাছা ও তালা-পাইকগাছা সীমান্ত কপোতাক্ষ নদের দু’পাড়ের ভূমিদস্যুরা চর দখল করে গড়ে তুলেছে বিভিন্ন স্থাপনা। বাড়িঘর, দোকানপাট, বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এমনকি শুকিয়ে যাওয়া নদ-নদীর মধ্যে এখন মৎস্য ঘেরও শোভা পাচ্ছে। কপোতাক্ষ নদের পাইকগাছার চাঁদখালী ও আশাশুনির বড়দল সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু করে কাটাখালী নদীর ইদুরকাঁটা মুখ পর্যন্ত প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার দীর্ঘ দু’টি নদ-নদীর চরভরাটী জায়গা প্রায় সম্পূর্ণ দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা।

অথচ উল্লেখিত নদ-নদী দিয়ে এক সময় পাইকগাছায় আসা-যাওয়া করতো বড় বড় লঞ্চ, ষ্টীমার, কার্গো, বড় ট্রলার-নৌকা। মাত্র ৮/১০ বছরের ব্যবধানে অত্র নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অপর নৌপথ কয়রার আমাদী হয়ে পাইকগাছার চাঁদখালী ও আশাশুনির বড়দল মোকামে এখনও নদীতে জোয়ারের সময় বড় বড় নৌযান বিভিন্ন মালামাল নিয়ে আসা যাওয়া করছে এবং উক্ত নদের জোয়ার-ভাটার সুবিধা নিয়ে তৎসংলগ্ন সহস্রাধিক মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।

অতি সম্প্রতি ভূমিদস্যুরা ডিসিআর এর নামে চাঁদখালী-বড়দল এলাকায় কপোতাক্ষ নদের দু’পাড়েই দখল প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। নদের সচল অংশে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নদ-নদীগুলো খনন না করে বরং তা দখল করে নেয়ায় একদিকে নৌপথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে এলাকায় জলাবদ্ধতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। দখলকারীদের এখনই রোধ করা না গেলে কাটাখালী নদীর মত কপোতাক্ষ নদের এই সচল অংশটিও অচল হয়ে পড়বে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারনা।

এদিকে বিগত ৫/৭ বছর যাবৎ খুলনা-পাইকগাছা-কয়রা সড়কের আঠারমাইল থেকে কয়রা পর্যন্ত রাস্তার বেশিরভাগ জায়গায় ভেঙ্গেচুরে বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুম এলেই অত্র সড়কে যানবাহন চলাচল এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। খুলনা-পাইকগাছা-কয়রা সড়কের আঠারমাইল থেকে কয়রা পর্যন্ত সড়ক সংস্কার করা জরুরী হয়ে পড়েছে। অন্যথায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

রাস্তা ভাঙার কারনে পরিবহন খরচ বেশি, এ জন্য এখানকার সব কিছুরই মূল্য বেশি। নদ-নদী দখলমুক্ত করে খনন ও রাস্তা মেরামত করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে প্রায় ৭/৮ লক্ষাধিক মানুষের জন্য এ দুই উপজেলা বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়বে বলে সচেতন মহলের ধারনা।