Monday, April 28, 2014

পাইকগাছায় তরমুজ চাষে কৃষকের ভাগ্য বদল

লবণাক্ত উপকূলীয় এলাকা পাইকগাছায় তরমুজের ভাল ফলন কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। ভাল ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি। বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত তরমুজ শুধু পাইকগাছার কৃষককের ভাগ্য বদলায়নি, বদলে দিয়েছে এলাকার আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট। চিংড়ি চাষে বিপর্যয়ে যখন কৃষকরা হিমশিম খাচ্ছে, তখন লবণাক্ত এলাকায় তরমুজের আশাতীত ফলন কৃষকদের করেছে স্বাবলম্বী।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২টি ইউনিয়নের এ বছর ১৬০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। দেলুটি ও গড়ইখালী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া, হাটবাড়িয়া, সৈয়দখালী, কালিনগর, হরিণখোলা, শান্তা, বাইনবাড়িয়া, আমিরপুর বগুড়ারচক, কুমখালী, হোগলার চকসহ বিভিন্ন এলাকায় তরমুজের আবাদ করেছে কৃষকরা। কম বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের আবাদ ভালো হয়েছে। গাছ ১/২ ফুট বড় হলে হালকা বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় চাষীদের জমিতে অতিরিক্ত সেচ দিতে হয়েছে। এতে তরমুজ চাষীদের বাড়তি টাকাও খরচ হয়েছে।

চাষীরা বেশিরভাগ ভিক্টর সুপার জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের তরমুজে ক্ষেত ভরে আছে। তরমুজের ক্ষেত দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। তরমুজ চাষে বিঘা প্রতি ৪/৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অনুকূল পরিবেশ থাকলে হেক্টর প্রতি ৪/৫ টন তরমুজের ফলনের আশা করছে চাষীরা। তবে শিলাবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে কৃষকরা আরো বেশি ফলনের আশাবাদী। চাষীরা হেক্টর প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করে ১ থেকে দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করছে।

সূত্রে জানা গেছে, তরমুজের বিভিন্ন গ্রেড রয়েছে। পাইকারীদের গ্রেড অনুসারে তরমুজ বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। ৪ কেজি থেকে তরমুজের গ্রেড শুরু। ক্ষেত থেকে আড়ৎদার বা ব্যাপারীরা ১ হাজার পিচের বিভিন্ন গ্রেডের তরমুজ ক্রয় করছে। বিভিন্ন গ্রেডের ভিন্ন ভিন্ন দাম। পাইকারী ৪ কেজি ওজনের একেকটি তরমুজের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা। গ্রেডের নিচের তরমুজ এলাকার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

তরমুজ চাষী মানবেন্দ্র মন্ডল, লোকেশ মন্ডল, নিতীশ মন্ডল, লোচন সরকার, সমারেশ মন্ডল জানান, এ বছর তরমুুজের আবাদ খুব ভালো হয়েছে। ক্ষেত থেকে ৩০ ভাগ তরমুজ তোলা হয়েছে এবং ৭০ ভাগ তরমুজ তুলতে বাকী আছে। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন আশা করছে চাষীরা।

উপকূলের লবণাক্ত এলাকায় ধান ও চিংড়ি চাষে কৃষকদের ভাগ্য ফেরাতে না পারলেও তরমুজ চাষে কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। লবণাক্ত এলাকার তরমুজ বেশি মিষ্টি হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। যশোর খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যাপারীরা কৃষকের ক্ষেত থেকে ট্রাক ও ট্রলার যোগে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আশাতীত তরমুজের ফলনে চাষীদের মুখে উচ্ছ্বাসের হাসি ফুটেছে। তবে উপকূলীয় এলাকার চাষাবাদ দেরিতে শুরু হওয়ায় কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, আবহাওয়া অনুুকূলে থাকায় তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি অফিস সবসময় চাষীদের তরমুজের ক্ষেতে গিয়ে কৃষকদের পরিচর্যাসহ পরামর্শ দিচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষকরা আশাতীত ফলন পাবে এবং তারা লাভবান হবে। আগামী মৌসুমে এ অঞ্চলে আরো অধিক জমিতে তরমুজ চাষে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ উৎপাদিত তরমুজ এ এলাকায় কৃষকদের শুধু ভাগ্য বদলায়নি, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটও বদলে গেছে। তরমুজের আবাদ পাইকগাছার কৃষকদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।