নিরাপদ পানি বঞ্চিত ৩৩ ভাগ মানুষ; সেনিটেশনের বাইরে ১৭ ভাগ
পাইকগাছায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ঔষধ স্বল্পতা এবং অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৫টি এলাকায় এখনো গড়ে উঠেনি কমিউনিটি ক্লিনিক। ফলে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ওই সব এলাকার ৫০ হাজার মানুষ। এলাকাবাসীর মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনা বৃদ্ধি পেলেও এখনও ১৭ ভাগ মানুষ অস্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার করছে। নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত রয়েছে ৩৩ ভাগ মানুষ। যার কারণে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বাস্তবমুখী পদক্ষেপে গত কয়েক বছর এলাকায় শিশু ও মাতৃ মৃত্যু নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সূত্র মতে, জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত পাইকগাছা উপজেলা। উপজেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। উপজেলার বিপুল এ জনসংখ্যার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত হিমসিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, ৪টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৬টি সাব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ২২১টি গ্রামের সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।
সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ২৯ প্রকার ঔষধ সরবরাহ করা হয় বলে উপজেলা স্বস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবুল ফজল দাবী করলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ, যে পরিমাণ ঔষধ সরবরাহ করা হয় সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ঔষধ স্বল্পতার পাশাপাশি রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র সংকট।
উপজেলার লতার তেতুলতলা, সোলাদানা, সোনাখালী, লস্কর, গড়ইখালী, কুমখালী ও পাতড়াবুনিয়ায় এখনও পর্যন্ত গড়ে উঠেনি কোন কমিউনিটি ক্লিনিক। ফলে স্বাস্থ্য সেবার জন্য প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হয় ৫ হাজার মানুষকে। কুমখালী গ্রামের আব্দুল লতিফ জানান, নিকটবর্তী কোন সেবা কেন্দ্র না থাকার ফলে বাধ্য হয়ে অনেকটা পথ পাড়ী দিয়ে পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রে যেতে হয়। এলাকাবাসীর মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনা বৃদ্ধি পাওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন ২০০-৩০০ লোকের আগমন ঘটে। ক্লিনিকগুলোতে ১ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইটার সপ্তাহে ৬ দিন, একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী ৩ দিন এবং একজন স্বাস্থ্য সহকারী ৩ দিন সেবা প্রদান করে থাকেন।
সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় মোট জনসংখ্যার ৮৩% মানুষ স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহারের আওতায় আসলেও এখনও ১৭ ভাগ মানুষ খোলা জায়গা ব্যবহার করে আসছে। অগভীর নলকুপ, রেইন ওয়াটার, হারভেস্ট এ টি.এস.এফের মাধ্যমে ৬৭ ভাগ মানুষের নিরাপদ খাওয়ার পানি ব্যবস্থা থাকলেও ৩৩ ভাগ মানুষ অনিরাপদ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে বলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শেখ সরফরাজ আলী জানান।
সক্ষম দম্পত্তি সহ সাধারণ মানুষকে সচেতন করার ফলে গত কয়েক বছর এলাকায় কোন শিশু ও মাতৃমৃত্যু নেই বলে দাবী করেছেন সাবেক উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শুকলাল বৈদ্য।
নতুন নতুন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, জনবল বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ ও জরাজীর্ণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমূহ অবকাঠামো সংস্কার করার মাধ্যমে এলাকার শতভাগ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।