শুরুটা ছিল ভাল; কিন্তু বর্তমানে যেন হিতে বিপরীত হতে চলেছে। পাইকগাছার কপিলমুনিতে প্রতি বছর বাড়ছে লবন পানির চিংড়ি ঘের, তাই কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমান আর পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। জানা যায়, পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি'সহ আশপাশের এলাকাতে ৮০’র দশকের শুরুর দিকে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে লবন পানিতে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। আজ যেখানে ফলছে সোনার ফসল, কাল সেখানে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠছে চিংড়ি ঘের। দুই তৃতীয়াংশ জমি প্রভাবশালী ঘের মালিকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এবং চাষ না করায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
বছরের পর বছর এ অঞ্চলে খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। চাষাবাদ না হওয়ায় হাজার হাজার শ্রমজীবি মানুষ কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন। শুরুতে জাতীয় অর্থনীতিতে চিংড়ি চাষ ইতিবাচক ভুমিকা রাখলেও বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছেন এলাকার কৃষককুল। প্রতি বছর কৃষকের ফসল ফলানো জমি চিংড়ি চাষের ঘেরে পরিণত হচ্ছে। ফলে ফসলের জমি কমে যাচ্ছে, তাই এলাকায় ধান ও সবজি চাষ বন্ধ হতে চলেছে। যেটুকু ফসলি জমি আছে তাও পাশের ঘেরের লবনাক্ততার প্রভাবে আশানুরুপ ফসল ফলছে না।
কৃষক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকায় অধিকাংশ জমিতে এখন লবন পানি তুলে চিংড়ি চাষ করো হচ্ছে, আর এই ঘেরের পাশে যে ফসলের জমিতে ফসল ফলানো হচ্ছিল সেখানে ঘেরের লবন রসের কারণে ফসল ফলছে না। ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের বাধ্য হয়েই ওই জমিতে ফসল ফলানো বন্ধ করে ঘের করতে হচ্ছে’।
বিশ্লেষকদের মতে, সরা বছর মাটিতে লবন পানি আটকে থাকায় মাটির গুণাগুন নষ্ট হয়ে উর্বতা হ্রাস পাচ্ছে ফলে বিরুপ প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্রের উপর। কোন কোন কৃষক আশানুরুপ ফসলের আশায় জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় সার ও ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন, কিন্তু তাতে কোন সুফল পাচ্ছেন না তাঁরা। আর তাই প্রতি বছরই দেখা দিয়েছে খাদ্য উৎপাদন ঘাটতি।
একাধিক চিংড়ি ঘের মালিক জানান, এক দিকে তাঁরা পূর্বের ন্যায় চিংড়ির বিক্রয় মূল্য পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ঘেরে ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে সাদা সোনা নামে ক্ষ্যাত এ চিংড়ি। ফলে কোন কোন বছর ঘের ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পুঁজি হারাচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এক দিকে চিংড়ির ব্যবসায় ধ্বস, অন্যদিকে ফসল ফলছে না।
এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে ১৬৫৭.৪৭ হেক্টর জমিতে ২৭২টি, হরিঢালীতে ৫৪৫.৩৩ হেক্টর জমিতে ২২২টি ও লতা ইউনিয়নে ৩৫৭৩.৪৭ হেক্টর জমিতে ৪৪৭টি চিংড়ি ঘের রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকৃতি প্রদত্তভাবে লবনাক্ততা বাড়ছে। সিডর-আইলা হওয়ায় লবন বিস্তৃত হয়েছে। যেখানে লবন পানি আছে সেখানে ফসল হবে না, পাশাপাশি চিংড়ি চাষের সুযোগ আছে। লবণ পানি যদি মিষ্টি পানিতে পরিণত করা যায় তাহলে চাষীরা ফসল ফলাতে পারবেন। তবে মিষ্টি পানি এলাকায় যদি কেউ লবণ পানি তুলে চিংড়ি চাষ করেন এমন অভিযোগ পেলে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।