Friday, November 4, 2016

পাইকগাছায় দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখছে ৩৭৩ সমবায় সমিতি

নারীর ক্ষমতায়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ, স্বনির্ভরতা অর্জন ও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশের সমবায় সংগঠনগুলো। সমবায়ের তীর্থস্থান হিসাবে খ্যাত খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় রয়েছে একটি সমবায় ব্যাংকসহ ৩৭৩ টি সমবায় সমিতি। যার সমবায়ীর সংখ্যা ২০ হাজার ৬৮৫ জন। ইতোপূর্বে এ উপজেলা থেকে ২ ব্যক্তি ও ২টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে। সংগঠনের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে এ অঞ্চলের অর্ধেক জনগোষ্ঠি। সমবায়ের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যাতে এ অঞ্চলে সমবায়ের কাছে দারিদ্রতা পরাজিত হবে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই মনে করেন সমবায় হতে পারে দারিদ্র বিমোচনের মূল চাবিকাঠি। 

৫ নভেম্বর সারাদেশে পালিত হচ্ছে ৪৫তম জাতীয় সমবায় দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে পাইকগাছা উপজেলা সমবায় বিভাগ ও সমবায়ীবৃন্দ র‌্যালী, আলোচনা সভাসহ আয়োজন করেছেন নানা অনুষ্ঠানের।



১৯০৪ সালে কো-অপারেটিভ ব্যাংকের মাধ্যমে সুন্দরবন সংলগ্ন এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম শুরু হয় সমবায় কার্যক্রম। এরপর ১৯০৯ সালে জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসি রায়) তার জন্মস্থান উপজেলার রাড়ুলীতে প্রতিষ্ঠা করেন রাড়ুলী কো-অপারেটিভ ব্যাংক। এরপর ধীরে ধীরে এলাকার মানুষ ঝুঁকে পড়ে সমবায় আন্দোলনে।

বর্তমানে সমবায় কার্যক্রম এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, এমন কোন পাড়া মহল্লা নেই যেখানে সমবায় সংগঠন নেই। বর্তমানে উপজেলায় সমবায় সমিতির সংখ্যা ৩৭৩টি। এসব সমবায়ের শেয়ার ও সঞ্চয় আমানতের পরিমাণ ১০ কোটিরও বেশি। এলাকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জনগোষ্ঠি সমবায়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। যার মধ্যে ৪০ ভাগই হচ্ছে নারী।

সমবায়ের মাধ্যমে সঞ্চয় গচ্ছিত করে আর্তনির্ভরশীল হয়েছে হাজারো মানুষ। সমবায় থেকে ঋণ নিয়ে অনেকেই কিনছে ভ্যান, নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্রসহ বিভিন্ন যানবাহন। এতে করে অনেক বেকার যুবকের সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। কৃষি, মৎস্য ও ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ।

সমবায়ের নানামুখী এসব পদক্ষেপের কারনে প্রতিনিয়ত কমছে বেকারত্বের সংখ্যা। হ্রাস পেয়েছে সামাজিক অপরাধের প্রবনতা। নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় ইতিবাচক ভূমিকায় সমবায়ে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে ধনী, গরীব, মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুবাদে ইতোপূর্বে এ উপজেলা থেকে দু’ব্যক্তি ও দু’টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। সমবায়ী হিসাবে ২০০০ সালে ষোলআনা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রয়াত মেয়র আলহাজ্ব মাহাবুবুর রহমান এবং ২০০৩ সালে ফসিয়ার রহমান কৃষি ও জনকল্যাণ সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব ফসিয়ার রহমান এবং প্রতিষ্ঠান হিসাবে ১৯৯৫ সালে ষোলআনা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি ও ২০১১ সালে ফসিয়ার রহমান কৃষি ও জনকল্যান সমবায় সমিতি এ পুরস্কার অর্জন করেন।

এ দু’টি সংগঠনের পাশাপাশি খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমাবায় সমিতি, জিরবুনিয়া সমবায় সমিতি, জোনাকি গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি ও সলুয়া পল্লী দুগ্ধ সমবায় সমিতিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সুনাম অর্জন করেছে। ২০১৪ সালে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় সমবায় মেলায় স্থান করে নেয় কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি।

সলুয়া পল্লী দুগ্ধ সমবায় সমিতির কথা না বললেই নয়, দু’বছর পূর্বে সমবায় বিভাগের প্রাক্তন সচিব মিহির কান্তি মজুমদারের প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠা হয় এ সংগঠনটি। সংগঠনের ১২৫ দলিত সম্প্রদায়কে বিনাসুদে প্রদান করা হয় ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋন। ঋনের টাকায় সংগঠনের সদস্যরা শুরু করেন গাভী পালন। বর্তমানে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১ হাজার লিটার দুধ। উৎপাদিত দুধ সরবরাহ করা হয় মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে। এভাবেই এলাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় গড়ে ওঠা সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সামাজিক নিরাপত্তায়।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মুকুন্দ বিশ্বাস জানান, এলাকার সমবায় সমিতিগুলো এতটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ যে, এখানে তেমন কোন ক্রেডিট নির্ভর এনজিও’র কার্যক্রম নাই। সমবায়ের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যাতে সমবায়ের কাছে দারিদ্রতা পরাজিত হবে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ-উল-মোস্তাক মন্তব্য করেন।

--মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা।