Wednesday, February 8, 2017

'ফটোক তুলি পেপারে দিলি কি ভাতা পাবানে?'

কপিলমুনির হাজারীর ভাগ্যে আজও জুটলো না বয়স্ক ভাতা !


‘কোনোদিন ভাবিনি আজ আমি পথে নামবো, বুড়ো (স্বামী) মরার পর আমি ভিক্ষে করে খাবো। এই শেষ বেলায় মানুষের দোরে না গেলি পেটে ভাত যাবে না এইডা ভাবিনি। শুনি হাসিনা সরকার বুড়ো-বুড়িগে ভাতা দেচ্চে, শুধু শুনি গ্যালাম আমার তো কেউ দেলে না, তালি কি আমার বয়স হয়নি’। --ভিক্ষার ঝুলি আর বাঁকা লাঠি হাতে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া পাইকগাছার কপিলমুনির নগর শ্রীরামপুর গ্রামের হাজারী বিশ্বাস কথাগুলো বলতে বলতে যেন নিজের অজান্তে কেঁদে ফেললেন। কপিলমুনির স্বর্ণপট্টিতে প্রতিবেদকের ক্যামেরা দেখে বলতে থাকেন ‘বাবা ফটোক তুলি পেপারে দিলি কি ভাতা পাবানে?’

পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির পার্শ্ববর্তী নগর শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত সুবোল বিশ্বাসের স্ত্রী নব্বই ছুঁই ছুঁই হাজারী বিশ্বাস বড়ই অসহায়। স্বামী ছিলেন দিন মজুর, একযুগ হলো তিনি স্বামী হারিয়েছেন। স্বামী সমিতি থেকে টাকা তুলে একটি ঘর তৈরী করে দিয়েছিলেন, অভাবের সংসারে ঘর ছাড়া কিছু রেখে যেতে পারেননি প্রিয় স্ত্রীর জন্য। হাজারী গত বছর ভাদ্র মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর তার শরীরটা মোটেও ভাল যাচ্ছে না। আর সেই থেকেই পেটের ক্ষুধা মেটাতে হাজারী বিশ্বাস ভিক্ষা পেশাটা বেছে নিয়েছেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি ১ ছেলে ও ১ মেয়ের জননী। অভাবের সংসারে ছেলেটা দিন মজুর। মেয়েকে কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া গ্রামে বিয়ে দেওয়া হলেও তার ভাগ্যটাও যেন প্রতিকূল। বিয়ের ৩ দিন পর জামাইয়ের চরম অবহেলায় তার ঘর বাঁধা হয়নি, সেই থেকে অভাগা মেয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন।

হাজারীর পড়ন্ত বেলায় কষ্টের জীবনের গল্পের অংশ বিশেষ, প্রতিদিন সকালে ভিক্ষার ঝুলি আর লাঠিতে ভর দিয়ে বেরিয়ে পড়েন কপিলমুনিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের দ্বারে। রাস্তাঘাটে যেখানে সুযোগ হয় তিনি একটা রুটি আর একটা বিস্কুট দিয়েই সকাল আর দুপুরের খাওয়া সেরে ফেলেন। বিকেলে আসরের আযানের সময় তিনি ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে ফিরেন। বাড়ি ফিরে তার মেয়ের হাতের রান্না দু’মুঠো ভাত খেয়ে রাত কাটে তার।

এই হলো কপিলমুনির নগর শ্রীরামপুর গ্রামের হাড়িপাড়ার অবহেলিত ‘হাজারীর জীবনের গল্প’। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আজ একবছর ধরে ভিক্ষে করি, আর ভাল্লাগে না। শরীলডা খারাপ, সরকার কোন দিন সাহায্য আর ভাতাও দেলে না’ কথা গুলো বলে কাঁদতে থাকেন তিনি।

সচেতন এলাকাবাসী বলছেন, সরকার যখন ভিক্ষুকমুক্ত খুলনা জেলা ঘোষণা দিলেন তার কিছুদিন পরেই ভিক্ষার ঝুলি হাতে হাজারীর এমন না পাওয়ার অর্তনাদ। সরকার এমন সব বয়ঃবৃদ্ধ মানুষের জন্য সাহায্য, সহানুভূতি আর ভয়স্কভাতা চালু করলেও আজও সমাজে এমন অসহায় হাজারী’রা সরকারি সহযোগীতা থেকে কি বঞ্চিতই থেকে যাবেন?

--পলাশ কর্মকার, কপিলমুনি, পাইকগাছা।