Tuesday, April 16, 2013

কপিলমুনিতে চারো ঘুরিয়ে দিয়েছে অনেকেরই ভাগ্যের চাকা !

চারো, চাই ঘুন্সি বা ঘুনি যে, যে নামেই সম্বোধন করুক না কেনো ঘের অঞ্চলে সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ি ধরতে এর কোনো জুড়ি নেই। খেওলা জালের ব্যবহার অধিকহারে কমে গিয়ে মাছ ধরতে এখন প্রতিটি ঘের মালিকের প্রধান অবলম্বন ঘুন্সি, ঘুনি, চারো বা চাই।

যার ফলে ঘুনি বা চারো তৈরী করে এ অঞ্চলের অনেকেই আজ সাবলম্বী। দারিদ্রতা দুর করে ঘুরিয়ে দিয়েছে তাদের ভাগ্যের চাকা। দক্ষিণ অঞ্চল সহ পাইকগাছাতে ব্যপক ভাবে এর ব্যবহার ও প্রচলন শুরু হয়েছে। সরকারী পৃষ্টপোশকতা পেলে এ শিল্প আরোও প্রসার ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন এ পেশায় নিয়োজিত কারিগররা।


বিগত ৮০’র দশকে মাছ ধরতে যে খেওলা জালের অবাধ ব্যবহার ছিল, কালক্রমে তা এখন শখের কোটাই রয়েছে। অনেকেই নিজ পুকুরের মাছ ধরতে বা শখ বসত খেওলা জাল বাড়িতে রেখে দিয়েছে। যা সচরাচর পাওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। এক সময় নদী মাতৃক দেশ হিসাবে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিল খেওলা জালের ব্যবহার। সে সময় খাল, বিল, জলাশয় ছিল উন্মুক্ত। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ছিল এলাকার প্রতিটি মানুষের কাছে অতি পরিচিত বাণী। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে বাঙ্গালী তার এ ঐতিহ্য ও অতীত এ সব বাণী এক প্রকার হরিয়ে ফেলেছে। খাল, বিল, এমনকি নদী পর্যন্ত সরকারী ইজারা প্রদান করায় বাঙ্গালীর পূর্ব ঐতিহ্য এখন এক প্রকার বিলিন। জানাগেছে, এক কালের সোনালী আঁশ খ্যাত পাট, ধানসহ নানা প্রকার শস্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়ে মুলত ৯০ এর দশক হতে দক্ষিনাঞ্চল জুড়ে ব্যাপকহারে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। শুধু তাই নয়, অধিক লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ একে একে ঝুকে পড়ে চিংড়ি চাষের উপর। এমতাবস্থায় সাদা সোনা চিংড়ি ধরতে প্রথমে খেওলা জালের ব্যবহার থাকলেও প্রযুক্তিগতভাবে চারোর ব্যবহার শুরু হয়। মাছ ধরার সহজ উপায় হিসাবে চারো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে কারণে অনেকে ভিন্ন পেশা ছেড়ে চারো তৈরীর পেশাকে বেঁছে নেয়। এ কাজে মুলত জড়িয়ে আছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। পাইকগাছা উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকাসহ কপিলমুনির শ্রীরামপুর গ্রামের লুৎফর রহমান, সবুজ হোসেন, নাছিরপুরের আমজাদ, পবিত্র, সুকুমার ও নোয়াকাটির আজিজসহ অনেকেই চারো তৈরী করে সাবলম্বী হয়েছে। ঘের মালিকরা সহজে সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ী ধরতে এ চারো ব্যবহার করছে নিচিন্তে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর সরকারী হিসাব মতে উপজেলায় ১৬ হাজার ৮ শ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। আর এ সকল মৎস্য ঘেরে মাছ ধরতে প্রায় ১ থেকে দেড় লক্ষ চারো উৎপাদন প্রয়োজন। যা বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘের মালিকরা প্রয়োজন মত সংগ্রহ করে থাকেন। এ পেশায় নিয়োজিত শিল্পীরা মুলত বাঁশ ও লাইলোন সুতা দ্বারা সারা বছরই চারো তৈরীর কাজ করে থাকেন। যদিও চারো তৈরী অত্যন্ত কষ্টের তবুও প্রতিটি চারোর মুল্য ১৩০ টাকা করে রাখা হয়, যা খরচ খরছা বাদে চারো প্রতি ৭০/৮০ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে বলে জানিয়েছেন চারো শিল্পী ও বিক্রিতারা।