Thursday, June 6, 2013

আজ পবিত্র শবেমেরাজ

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবেমেরাজ। এ রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজের বিধানও করা হয় এই মহিমান্বিত রাতে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে রাতটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। 'মেরাজ' শব্দটি উরুজ ধাতু থেকে নির্গত, অর্থ ঊর্ধ্বগমন করা।

'মেরাজ' শব্দের অর্থ ইলমে সরফ হিসেবে ঊর্ধ্বগমনের যানকে বোঝায়। 'ইসরা' শব্দের অর্থ রাতের ভ্রমণ। যেহেতু ভ্রমণটি হয়েছিল রাতে, তাই একে ইসরা ও মেরাজের রাত বা শবেমেরাজ বলে।

মেরাজের রাতে সপ্ত আসমান পেরিয়ে আরশে আজিমে পৌঁছে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন শেষে পৃথিবীতে ফিরে আসেন মহানবী (সা.)। এ ঘটনা নবীজির মাধ্যমে তার মোজেজা হিসেবে প্রকাশ পেয়েছিল। শবেমেরাজ বিশ্বাস করা মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব। মেরাজ শেষে ফিরে আসার পর রাসূল (সা.) পুরো ঘটনা হজরত আবু বকরের (রা.) কাছে বর্ণনা করেন। আবু বকর (রা.) রাসূলের (সা.) মুখে শুনেই নিঃসংশয়ে তা বিশ্বাস করেন। রাসূল (সা.) তাকে 'সিদ্দিকী' বা 'বিশ্বাসী' খেতাব দেন। মক্কার কাফেররা রাসূলের (সা.) মেরাজের ঘটনাকে অবিশ্বাস করে, তার নামে কুৎসা রটায়।

মেরাজের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল আরবি রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত রাতে। মহানবী (সা.) তখন শুয়েছিলেন উম্মে হানীর ঘরে। সেখান থেকে জিব্রাঈল (আ.) তাকে নিয়ে কাবার হাতিমে যান। জমজমের পানিতে অজু করে বোরাকে আরোহণ করেন মহানবী (সা.)। মক্কা শরিফ থেকে জেরুজালেমের বায়তুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যাওয়া হয়। রাসূল (সা.) সেখানে নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শেষে নবীজি জিব্রাঈলের (আ.) সঙ্গে প্রথম আকাশে পৌঁছান। প্রবেশদ্বারে নিয়োজিত ফেরেশতা প্রশ্ন করলেন_ 'কে?' উত্তরে জিব্রাঈল (আ.) বললেন, 'আমি জিব্রাঈল।' আবার প্রশ্ন হলো, 'সঙ্গে কে?' জিব্রাঈল (আ.) বললেন, 'মুহাম্মদ (সা.)।' জিজ্ঞাসা করা হলো, 'তাকে কি নবুয়ত দান করা হয়েছে?' জিব্রাঈল (আ.) বললেন, 'হ্যাঁ!' অতঃপর প্রথম আকাশের ফটক খুলে দেয়া হয়। উভয়ে প্রবেশ করলে হজরত আদমের (আ.) সঙ্গে সাক্ষাৎ ও কুশলবিনিময় করেন শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। দ্বিতীয় আকাশে মহানবীকে (সা.) স্বাগত জানান হজরত ঈসা (আ.)। তৃতীয় আকাশে মহানবীকে (সা.) অভ্যর্থনা দেন হজরত ইয়াহইয়া (আ.)। এভাবে সাত আকাশ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মহানবী (সা.) সাক্ষাৎ করেন চতুর্থ আকাশে হজরত ইদ্রিস (আ.), পঞ্চম আকাশে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আকাশে হজরত মুসা (আ.) এবং সপ্তম আকাশে হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সঙ্গে।

সপ্তম আকাশ থেকে বাকি পথ একাই গমন করেন মহানবী (সা.)। সেখান থেকে নবীজি রফরফ নামক একটি যানে করে আরশে আজিম অভিমুখে সফর করেন। সত্তর হাজার নূরের পর্দা ভেদ করে আরশে আজিমে পৌঁছান। সেখানে এক ধনুক দূরত্ব থেকে আল্লাহর সঙ্গে মহানবীর (সা.) কথোপকথন হয়।