Thursday, April 10, 2014

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেখানে নিত্যদিনের পথচলা

আঠার মাইল-পাইকগাছা সড়কের পুরোটাই গর্তে ভরা। কোথাও ভালো নেই। দেশের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে দক্ষিণ জনপদের তিনটি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের ১৫ লাখ মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো দুর্দশাগ্রস্ত এ রাস্তাটি। এলাকার সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের এক কথা, সড়কের এ দুরাবস্থার কারণে উপকূলীয় এলাকাটি বিচ্ছিন্ন জনপদে পরিণত হয়েছে।

ফাইল ফটো
কপিলমুনি বণিক সমিতির সভাপতি এম বুলবুল আহমেদ জানান, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার চারটি, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার একটি পৌরসভা‘সহ ১১টি ও কয়রা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো আঠার মাইল-পাইকগাছা সড়ক।

আষাঢ় মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত ছয় মাস এই রাস্তা কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এ সময় রাস্তার ওপর পানি থাকে প্রায় তিন ফুট। বছরের এই ছয় মাস এলাকাবাসী পানিবন্দী জীবনযাপন করে। বাকি ছয় মাস ভাঙ্গা চোরা গর্তে ভরা বিধ্বস্ত রাস্তায় যানবাহন চলে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইকগাছা-আঠার মাইল সড়কটির কপিলমুনি থেকে আঠার মাইল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার চলাচলের একবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তালা উপজেলা সদর থেকে পাইকগাছার গোলাবাটি এবং তালার গোনালী- খৈতলা এলাকার অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকগুলো চলার সময় বারে বারে গর্তে উল্টে পড়ছে।

মৌসুমের সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাটির অবস্থা অবর্ণনীয় রূপ ধারণ করে। গর্তগুলোতে পানি জমে ডোবার আকার ধারণ করে। কাঁদা-পানিতে সয়লাব হয়ে আষাঢ়ে গ্রামীণ ভাগাড়ের মতো অবস্থা হয়। এমনই পরিবেশে চলতে গিয়ে মারিয়া নামের সাত মাসের একটি শিশুর করুণ মৃত্যু হয়েছে কিছু দিন আগে। গতকালও কপিলমুনিতে সড়ক দুর্ঘটনায় (বাসের একসেল ভেঙ্গে চাকা খুলে যায়) ১০ জন আহত হয়েছেন।

পাইকগাছা উপজেলার ইউপি মেম্বর হাসান বিশ্বাস জানান, সড়কটির এ সমস্যা নতুন বা দু’এক বছরের না। সড়ক উন্নয়নের নামে মাঝে মধ্যে কাজ হয় ঠিকই, কিন্তু তা এতোই জোড়াতালি দেয়া যে অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। গত বছর কোটি টাকা ব্যয়ে বর্ষার ভেতর কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্ষা যেতে না যেতেই সে কাজের চিহ্ন আর চোখে পড়ছে না।

ব্যবসায়ী প্রবীর জয় ও কম্পিউটার ব্যবসায়ী মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, সড়কের এ সমস্যার কারণে পণ্য পরিবহনের খরচ বেশি পড়ছে। এ কারণে অন্য এলাকার তুলনায় স্থানীয় হাট-বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি।

খুলনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওলিউল হোসেন সড়কটির সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, সড়কটি মূলতঃ কপোতাক্ষ সমস্যার শিকার। এ নদের উপচে পড়া পানিতে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবুও জনগণের যোগাযোগ সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের চেষ্টার ক্রটি নেই। এবারও সড়কটির উন্নয়নে ১০ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে।