Thursday, April 10, 2014

ফলোআপ: পাইকগাছায় স্ত্রী-সন্তানকে জবাই করে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা

ঘাতক দীপক ছিল মাদকাসক্ত ও মানসিক ভারসাম্যহীন 

 

কপিলমুনিতে স্বামীর হাতে স্ত্রী-পুত্র খুন হওয়ার ঘটনার একটু একটু করে জট খুলতে শুরু করেছে। পুলিশের ধারণা ঘাতক দীপক ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন ও মাদকাসক্ত। আর লোমহর্ষক এ ঘটনায় পাইকগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

সূত্রে প্রকাশ, কপিলমুনির দক্ষিণ সলুয়া গ্রামের মৃত সন্তোষ দাশের মাদকাসক্ত পুত্র দীপক দাশ (৪৫) সোমবার গভীর রাতে তার স্ত্রী অনিমা দাশ (৩০) ও তার পুত্র সজিব দাশ (৮) কে ঘুমন্ত অবস্থায় হাসুয়া দা দিয়ে জবাই করে হত্যার পর সে নিজেই বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখায়।

এদিকে মঙ্গলবার খুলনার এডিশনাল পুলিশ সুপার শফিউল্লা ও পাইকগাছা ভারপ্রাপ্ত ওসি (তদন্ত) গাজী কামাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লাশ ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার মামুদকাটী মহাশ্বশানে শেষ কৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

তবে লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের আসল কি রহস্য তা অনেকটা অন্ধকারে থাকলেও পুলিশ, এলাকাবাসী, ঘাতকের পরিবারের ভিন্ন বক্তব্য মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। ঘাতকের পরিবারের সদস্যদের দাবি, সে শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাকে বাংলাদেশ-কলকাতার বহু ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে সুস্থ হয়নি।

এদিকে এলাকাবাসী বলছে, সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, সে ইতোপূর্বেও স্ত্রী সন্তানদের চেননানাশক খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করে। অন্যদিকে পুলিশের ধারণা সে মাদকাসক্ত থাকার কারণে এমনি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা জন্ম।

লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের পরদিন সকালে সরেজমিনে গেলে ঘাতক দীপক ও নির্মমভাবে খুন হওয়া অনিমা দাশের ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া কন্যা প্রিয়াঙ্কা বার বার কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলতে থাকে, আমার মা-ভাইয়ের লাশ যেন পোস্টমার্টেম না হয়, আমার বাবার কোন দোষ নেই, আমার বাবা নির্দোষ।

এলাকাবাসীর মনে অত্যন্ত সহজভাবেই একটি প্রশ্ন দানা বাধছে, তার মা-ভাইকে হত্যা করার পরও কেন তার বাবাকে নির্দোষ বলছে সে। স্বাভাবিকভাবেই অনেকে ধারণা করছেন, সুপরিকল্পিতভাবে হয়তোবা চেতনানাশক খাইয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

সূত্রের দাবি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা’টি বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে দীপকের বসতঘরের সামনে দা মোড়ানো কাগজ ও ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ সেগুলো আলামত হিসেবে সংগ্রহ করে। অনেকের কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, স্ত্রী-পুত্র হত্যার পর সে তার মেয়েকেও হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। হত্যাকারী যদি মাদকাসক্ত বা মানসিক ভারসাম্যহীন হয় তাহলে বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় পরিকল্পিতভাবে কি করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হলো ?

পাইকগাছা থানার ওসি (তদন্ত) কাজী কামাল হোসেন এ হত্যাকান্ড সম্পর্কে বলেন, চেতনানাশক খাইয়ে হয়তোবা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে পোস্টমার্টেম রিপোর্ট আসলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে। ঘটনায় ঘাতকের শ্যালক মৃত্যুঞ্জয় দাশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ে করেন, মামলা নং-২০, তাং ০৮/০৪/১৪।

সবমিলিয়ে কপিলমুনির এ আলোচিত হত্যাকাণ্ডের নায়ক বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিরাপদে চিকিৎসাধীন থাকলেও এলাকাবাসীর মনে সস্তি ফিরছে না। নিজেদের অজান্তেই যেন আতংক, ভয় আর নানান প্রশ্ন বাসা বাঁধছে মনে।