Monday, June 2, 2014

পাইকগাছা-আঠারমাইল সড়ক সংস্কারে দুর্নীতির অভিযোগ

মাত্র ২০০ গজ রাস্তা অতিক্রমে ট্রাকগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ২-৩ দিন


পাইকগাছা-আঠারমাইল প্রধান সড়কের তালা থেকে কপিলমুনি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন এই জনপদের লাখ লাখ মানুষ। অত্যন্ত ধীরগতিতে ও অপরিকল্পিতভাবে চলমান কাজে অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটু পানি ও কাদা জমে যাচ্ছে। আর বৃষ্টি শেষে প্রচণ্ড তাপদাহে সৃষ্ট ধূলোয় রাস্তায় চলা দূরহ হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ গত দু’দিনের বৃষ্টিতে প্রচণ্ড কাদায় সেখানকার মাত্র কয়েকশ মিটার রাস্তা অতিক্রম করতে যানজটে হিমায়িত পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ২ দিন পর্যন্ত। সার্বিক পরিস্থিতিতে সড়কে যেকোনো সময় স্থায়ীভাবে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছা-আঠারমাইল প্রধান সড়ক (৩৩ কি.মি.) দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তালা থেকে কপিলমুনির গোলাবাটি পর্যন্ত প্রায় ১০ কি.মি. রাস্তা ২০১১ সালের ৮ আগস্ট প্রচণ্ড বৃষ্টি ও কপোতাক্ষ নদের উপচে পড়া পানিতে কয়েক মাস পর্যন্ত ৪/৫ ফুট তলিয়ে থাকে। রাস্তায় পথচারী থেকে শুরু করে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর ২০১৩ সালে বর্ষা মওসুমে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই এলাকার ২০ কি.মি. রাস্তার রিপিয়ার (সিলকোডের) কাজ হলেও মাত্র ৫/৬ মাসের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরে বড় বড় খাদের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে সড়কে সরাসরি ঢাকাগামী পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ সড়কের তালা থেকে কপিলমুনির গোলাবাটি পর্যন্ত ১০ কি. মি. সড়কের মধ্যে অধিকতর খারাপ ৬ দশমিক ৫০ কি. মি. রাস্তা ৪ ফুট উঁচুসহ নির্মাণে ১২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়।

পিএমপির (প্রিয়োডিক মেইনট্যান্স প্রজেক্টে) আওতায় গত মাস থেকে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হলেও প্রথম থেকেই ধীরগতি ও অপরিকল্পনাসহ নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়মে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের মূল ১৮ ফুট রাস্তার বাইরে মাটি দিয়ে দু’পাশে উঁচু করে ৪ ফুট প্রশস্থ করা হচ্ছে প্রথমেই। আর প্রথম সমস্যা শুরু এখান থেকেই। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাটি পরিণত হচ্ছে পানি বেঁধে সরু খালে। এ সময় খালি গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা হাঁটু পানিতে পথচারীরা পর্যন্ত চলতে পারছেন না।

সমস্যা এখানেই শেষ নয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একটি মাত্র স্কেভেটর দিয়ে রাস্তা খননে মূল কাজে ধীরগতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দুর্নীতি। দিনের বেলায় যানজটের অযুহাতে কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা থেকে সারা রাত পর্যন্ত রাস্তায় প্রথমে বালু ও পরে সাববেইজ, ম্যাকাডাম করছে এতে তারা উন্নত মানের খোয়া কম দিয়ে রাস্তা থেকে কাঁদা-মাটি মিশ্রিত পুরনো নিম্নমানের খোয়া-মাটি দিয়ে পূরণ করছে।

এক্ষেত্রে তারা ভালোমতো ডাম্পিং করতে পানি পর্যন্ত দিচ্ছে না। কোনো রকম রোলার দেয়ার সময় সামান্য পরিমাণ পানি ব্যবহার করছে। সব মিলিয়ে বর্ষার আগে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে সব ধরনের যান চলাচল।

এ ব্যাপারে রাস্তার কাজের তদারকিতে আসা ঠিকাদার পক্ষের জনৈক এরশাদ বলেন, এলাকার মানুষের কপাল ভালো যে কাজটা হচ্ছে। যেভাবে রাস্তা করার কথা সেভাবে করছি। পত্রিকায় লিখে কাজ হবেনা, উপর মহল আমাদের সঙ্গে আছে।

এদিকে আঠারো মাইল থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত ৩৩ কি.মি. সড়কের বাকি ২৬ কি.মি. রাস্তা নির্মাণের এখনও পর্যন্ত কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান কর্তৃপক্ষ। সুষ্ঠ ভাবে রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী ।