Friday, August 22, 2014

কপিলমুনিতে কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও ধর্ষণ চিত্র মোবাইলে ধারণ (ফলোআপ)

৫ জনের নামে মামলা, গ্রেফতার ২; কথিত ভিডিও ফাইল উদ্ধার হয়নি


পাইকগাছায় প্রেমিককে আটকে রেখে কলেজ ছাত্রী প্রেমিকাকে গণধর্ষণ ও ধর্ষণের দৃশ্য ধারণ করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে এক দল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় ধর্ষিতা নিজেই বাদি হয়ে পাইকগাছা থানায় ৯ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেছে। 

পুলিশ এ ঘটনায় ২ জনকে আটক করলেও মূল আসামীরা পলাতক রয়েছে। সোমবার ঘটনাটি ঘটলেও ঘটনা ফাঁস ও জীবননাশের হুমকিতে ২ দিন পর বুধবার রাতে থানায় মামলা হয়েছে।


থানা পুলিশ, এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, ঘটনার দিন দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার হরিঢালী-কপিলমুনি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির জনৈক ছাত্রী তার দীর্ঘ দিনের প্রেমিক গদাইপুর এলাকার জনৈক সুমনের সাথে কথা বলতে বলতে পায়ে হেঁটে পার্শ্ববর্তী সাহাজাতপুরস্থ তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিল।

পথিমধ্যে মামুদকাটী খ্রিষ্টান মিশনের নিকটবর্তী হারুণ গাজীর দোকানের সন্নিকটে পৌছালে সেখানে উপস্থিত হরিঢালী ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পার্শ্ববর্তী গ্রামের মৃতঃ সৈয়দ গাজীর ছেলে খোরশেদ গাজী (২৩), মামুদকাটীর অশোক হাজরার ছেলে ও খুলনা সিটি পলিটেকনিক কলেজের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র সুব্রত হাজরা (২৪), একই গ্রামের মুনছুর আলী খাঁর ছেলে মুনমুন খাঁ (২৫) ও দোকান মালিক সোহেল উদ্দিন গাজীর ছেলে হারুণ গাজী (৩৫), গহর গাজী (৩০) তাদের পথরোধ করে উল্টোপাল্টা প্রশ্নবানে জর্জরিত করে কৌশলে দোকানের পেছনে অবস্থিত হারুনের বসতবাড়িতে নিয়ে যায়।

সেখানে নিয়ে ছাত্রীর সাথে থাকা প্রেমিক সুমনের কাছ থেকে ২টি মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধোর দিয়ে পাশের ঘরে আটকে রেখে ছাত্রীকে অন্য ঘরে নিয়ে পালাক্রমে খোরশেদ, সুব্রত, মুনমুন, গহর’সহ অন্যান্যরা উপর্যুপরী ধর্ষণ করে। এদিকে ধর্ষণের চিত্র মোবাইলে ধারণ করতে থাকে ঘটনার প্রধান সহযোগি ও বাড়ির মালিক হারুন গাজী।

প্রত্যক্ষদর্শী আয়েরা বেগম জানান, ঘটনার সময় ওই কলেজ ছাত্রীটি নিজেকে বাঁচাতে ব্যাপক কান্নাকাটি ও ধর্ষকদের পা ধরে অনুনয়-বিনয় করলেও তারা তাকে রেহাই দেয়নি। শেষে মেয়েটিকে বিষয়টি কাউকে না বলার শর্তে মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটসহ সর্বমহলে ফাঁস ও জীবননাশের হুমকি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে বিষয়টি ক্রমান্বয়ে জানাজানি হলে সে পরিবারের সবাইকে তার উপর ঘটে যাওয়া বর্বরোচিত লোমহর্ষক পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা খুলে বলে।

এরপর বুধবার তারা থানায় খবর দিলে ওসি সিকদার অক্কাজ আলীর নের্তৃত্বে থানা ও হরিঢালী ফাঁড়ির এক দল পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার ও তার তথ্যে প্রথমে ঘটনাস্থলে হানা দিয়ে ধর্ষণ কাজের প্রধান সহযোগী ও ভিডিও গ্রাহক দোকানদার হারুন গাজী ও ধর্ষক মুনমুন খাঁকে গ্রেফতার করে। তবে ওই সময় পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে খোরশেদসহ অন্যান্যরা পালিয়ে যায়।

এদিকে গতকাল ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় ধর্ষিতা নিজেই বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে, মামলা নং ৩০, তাং ২০/০৮/১৪।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাইকগাছা থানার ওসি (তদন্ত) শ্যামলাল নাথ জানান, মামলার এজাহার নামীয় ২ জনকে আটক করেছি, বাকিদের আটকের জোর চেষ্টা চলছে। তবে কথিত ভিডিও ফাইলটি এখনো উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

এলাকাবাসী বলছে, হারুণের বাড়ি ও দোকানে দীর্ঘদিন যাবত রাত-দিন মেয়ে নিয়ে ফুঁর্তি, জুয়ার আসর, মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অপকর্ম চলে অসছিল। তবে তার সাথে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কপিলমুনি-হরিঢালী মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী উপস্থিতি আশংকাজনক হারে কমছিল। এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ শেখ মেজবাহ উদ্দিনের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। কলেজ স্টাফরা জানান, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসে স্যার পাইকগাছাতে ব্যস্ত আছেন।

এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।