Sunday, September 7, 2014

সাবধান ! কয়রায় বিয়ের নামে ঘটছে নারী পাচার

বিয়ের নামে ঘটছে নারী পাচারের ঘটনা। ছেলে গার্মেন্টেসে চাকরি করে। অনেক টাকা বেতন পায়। বিয়ে দিলে সুখে থাকবে। তার পর বিয়ে হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই জানা যায় তাদের এ বিয়ে ছিলো সাজানো। তারা বিয়ে করে নারী পাচারের ঘটনা ঘটায়। একটি সংঘবদ্ধ পাচার চক্র গ্রামের সহজ সরল ও দরিদ্র মেয়েদের বিয়ের নামে প্রতারণা করছে।

ভাগ্যক্রমে আইলা দুর্গত কয়রা উপজেরা সাতহালিয়া গ্রামের স্বপ্না খাতুন জীবন নিয়ে ফিরে আসলেও পাচারকারীদের নির্মম অত্যাচারের ক্ষত নিয়ে তাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এখন সে চোখে ভালো দেখতে পায় না। শুধু নির্যাতন নয় উল্টো পাচার চক্র তার ও তার ভাইয়ে বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এই পাচার চক্র দেশে ও দেশের বাইরে সিন্ডিকেট করে পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, কয়রা উপজেলার সাতহালিয়া গ্রামের আনার গাজীর ছেলে মোঃ শাহরিয়ার রশিদ একজন দুষ্ট প্রকৃতির লোক। সে গ্রামের সহজ সরল মানুষের সাথে বিভিন্ন সময়ে প্রতারণা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে কয়রার সাতহালিয়া গ্রামের আনার গাজীর ছেলে শাহরিয়ার রশিদ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খরসংঘ গ্রামের মোঃ আদম আলী মোল্লার ছেলে মোঃ শরিফুল ইসলামকে গ্রামে নিয়ে যায় এবং তার নিকট আত্মীয় ও খুব পরিচিত বলে জানায়।

শাহরিয়ার রশিদ জানায় মোঃ শরিফুল ইসলাম ঢাকার একটি বড় গার্মেন্টেসে গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে চাকরী করে। মোটা অংকের বেতন পায়। এভাবে সাতহালিয় গ্রামের মৃত আবদুল গনি গাজীর পরিবারকে ম্যানেজ করে এবং আব্দুল গনি গাজীর মেয়ে স্বপ্না খাতুনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মোঃ শাহরিয়ার রশিদ একই গ্রামের লোক হওয়ায় তার কথা মতো স্বপ্না খাতুনের পরিবার বিশ্বাস করে। সে মোতাবেক চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারী শরিয়াত মোতাবেক বিয়ে হয় এবং পরে রেজিস্ট্রি কাবিনমূলে বিবাহ সম্পন্ন হয়।

তাদের এ বিয়েরে সময়ে গোটা গ্রামে ধুম পড়ে যায়। গ্রামবাসী অবাক হয়ে যায় বর পক্ষে বিপুল আয়োজন দেখে। সকলে জানে গরীব ঘরের মেয়ে বড় লোকের ঘরে বউ হতে চলেছে। স্বপ্না খাতুন ও তার পরিবারের সে আশা ধূলোয় মিশে যায় অল্প কিছুদিন পরে। বিয়ের ৬ দিন পরে ছেলে ঢাকায় চাকরি করার কথা বলে স্বপ্নাকে ঢাকায় নিয়ে যায়।

প্রথমবার তাকে ঢাকায় নিয়ে অল্প কিছুদিন পর আবার ফিরে আসে এবং চলতি বছরের ৯ মার্চ আবার তাকে ঢাকায় নিয়ে যাবার কথা বলে ভারতে পাচার করে নিয়ে যায়। তারা অবৈধপথে ভারতে নিয়ে যায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ঘুটিআরী গ্রামে আগে থেকে অবৈধভাবে বসবাসকারী মোঃ শরিফুল ইসলামের বোন রহিমা খাতুন ওরফে রাই এবং ভগ্নিপতি মুন্নার বাসায় তোলে।

সেখানে তাকে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করতে বলে। পতিতাবৃত্তি না করতে চাইলে স্বপ্না খাতুনকে শারীরিভাবে মারধর করা হয়। তার মাথায় আঘাত করা হয় এবং তার দুপায়ের তলায় দিনের পর দিন লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এভাবে কয়েকদিন কাটার পর তাকে দিয়ে পতিতাবৃত্তি করতে না পেরে শরিফুল ও তার বোন এবং ভগ্নিপতি ঠিক করে স্বপ্না খাতুনকে বিক্রি করে দেবে। সে মোতাবেক তারা চলতি বছরের ৮ মে ভারতের অজানা দালালদের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। এসময়ে শরিফুল বাংলাদেশে অবস্থাররত শাহরিয়ার রশিদকে জানায় তোমার ভাগের এক লাখ টাকা দেওয়া হবে। যে কথাগুলো পাশের কক্ষ থেকে স্বপ্না খাতুন শুনতে পায়।

ওই দিন রাতে স্বপ্না সেখান থেকে বাইরে প্রাকৃতিক কাজে যাবার নাম করে পালিয়ে যায় এবং সকালে পাশ্ববর্তী একটি মসজিদের কাছে যেয়ে একজন মুসল্লীকে পায়। ওই মুসল্লীকে সব জানিয়ে তাকে বাঁচানোর কথা বললে তিনি তাকে সহযোগিতা করেন। স্বপ্না খাতুন জানায়, ওই মুরব্বী তার কাছ থেকে তার বাড়ির মোবাইল নম্বর নেন এবং তিনি মোবাইলে তার পরিবারের সাথে কথা বলেন। পরে ১৩ মে সে সেই মুরব্বী লোকের সহায়তায় চোরাই পথে বাংলাদেশে চলে আসে। কিন্তু স্বপ্না খাতুন দেশে ফিরলেও তার শরীরের অবস্থা ভালো ছিলনা।

সে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। তাকে শারীরিকভাবে চরম নির্যাতন করা হয়। এঘটনার পর স্বপ্না খাতুনের ভাই লাভলু হোসেন বাদী হয়ে খুলনার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ১৭জুন একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার দুই নম্বর আসামী শাহরিয়ার রশিদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং ২৬ আগস্ট তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।

কিন্তু তাকে রিমাণ্ডের আবেদন না করায় গত সপ্তাহে সে জামিন নিয়ে বের হয়ে এসে হুমকি দিচ্ছে মামলার প্রত্যাহেরর জন্য। ইতোমধ্যে শাহরিয়ার রশিদ তাদের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আর কথিত স্বামী এক নম্বর আসমী মোঃ শরিফুল ইসলাম ও তার বোন রহিমা ওরফে রাই এবং ভগ্নিপতি মুন্না এখন ভারতে পলাতক রয়েছে।

এদিকে তাদের এই মানবপাচারের ঘটনাটি জানাজানি এবং মামলা হলে ধুরন্ধর শরিফুলের মা জরিনা বেগম বাদী হয়ে পাল্টা তাদের ছেলেকে পাচার করা হয়েছে এমন অভিযোগে গত ১১ আগ্সট একটি মিস পিটিশন ৩৭১/১৪ দাখিল করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। স্বপ্না খাতুন জানায়, আসামী তার কথিত স্বামী মোঃ শরিফুল ইসলাম, তার মা জরিনা বেগম,বোন রহিমা,ওরফে রাই, ভগ্নিপতি মুন্না আর কয়রার সাতহালিয়া গ্রামের মোঃ শাহরিয়ার রশিদ সকলেই মানবপাচারকারী দলের সদস্য।

সে জানায়, তাদের বাংলাদেশ ও ভারতের দালাল এবং সিন্ডিকেট আছে। তাদের কাছে বন্দী থাকার সময়ে সে কিছু কিছু জানতে পেরেছে। তাছাড়া তারা এই কাজ করে বলে তাদের রয়েছে অনেক অর্থ। প্রশাসনসহ সব কিছু তারা ম্যানেজ করে অনায়াসে।

এলাকাবসীর অভিযোগ এই ঘটনটি সুষ্ঠু তদন্ত করলে মানবপাচারের আন্তঃদেশীয় সিন্ডিকেট চক্রের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। তাদের দাবি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আসামী মোঃ শাহরিয়ার রশিদকে রিমাণ্ডে নিলে প্রকৃত মানবপাচারের রুট উদঘাটন হতে পারতো।