Saturday, April 23, 2016

পাইকগাছায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরমে, জনজীবন বিপর্যস্ত

সাব স্টেশনে বিদ্যুৎ থাকলেও দেয়া হয় না, পুরস্কার লাভের আশায় !


পাইকগাছায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরমে পৌঁছেছে। মওসুমের ভয়াবহ ভ্যাপসা গরমে প্রাণীকূলের অবস্থা নাকাল। চলতি এইচএসসি, ডিগ্রী ও অনার্স পরীক্ষার্থীদের পড়া-লেখায় চলে এসেছে চরম স্থবিরতা। ব্যাহত হচ্ছে কলকারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন। বিশেষ করে চিংড়ি উৎপাদন মওসুমে স্থানীয় বরফ কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত বরফ উৎপাদন না হওয়ায় চিংড়ি চাষি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কিন্তু সাব স্টেশনে বিদ্যুৎ থাকলেও তা বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। সিস্টেম লস কমাতে পুরস্কার লাভের আশায় ও মোটরভ্যান চার্জ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুবিধা লাভের আশায় দিনের বেলায় লোডশেডিং এর অজুহাত দেখিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে পাইকগাছার পল্লী বিদ্যুতের অপরিকল্পিত মেইন তার (সোর্স লাইন) “রক্ষণাবেক্ষণ কাজের” অজুহাতে পাইকগাছা-কয়রার প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকদের দিনের বেলায় বিদ্যুৎ নিয়ে দুর্ভোগে রেখেছিলেন কর্তৃপক্ষ।



সংশ্লিষ্ট নির্ভর যোগ্য সূত্র জানায়, সিস্টেম লস কমাতে পারলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরস্কৃত করে। তাই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে সাব স্টেশনে বিদ্যুৎ থাকতেও দিনের বেলায় ও সন্ধ্যা থেকে রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখছে। এসময়ের মধ্যে কমপক্ষে প্রতিদিন ১৫/২০ বার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করে। কখনো কখনো বিদ্যুৎ গেলে অপেক্ষা করতে হয় ৩/৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, জনপদে আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মটর চালিত ভ্যান। বিভিন্ন এলাকায় ঐ সকল ভ্যানের চার্জ দিতে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে চার্জ স্টেশন। তাদের কাছ থেকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আদায় করে থাকেন নিয়মিত সুবিধা বা বখরা।

একদিকে সিস্টেম লস কমাতে পারলে পুরস্কার, অন্যদিকে চার্জ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত নজরানা আদায়। দুইয়ের কোপানলে আটকা পড়েছে জনপদের প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ ভাগ্য।

পাইকগাছায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকলেই এনিয়ে দুর্ভোগে থাকলেও কারোর যেন কিছুই করার নেই। বিষয়টি যেন একেবারেই স্বাভাবিক !

এ ব্যাপারে এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাজমুল, কালাম, নাদির, মিজানসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটে তাদের স্বাভাবিক পড়া-লেখা চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্যাহ বাহার জানান, তাদের কলেজে বর্তমানে এইচএসসি, ডিগ্রী ও অনার্সসহ ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি বাড়িতে তাদের পড়া-লেখায় চরম ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয় অন্যতম প্রধান বরফ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেয়া ফিসের ব্যবস্থাপক শওকাত হোসেন জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে তাদের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় চিংড়ি ব্যবসায়ীদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যায় উৎপাদন ভরা মওসুমে তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত দামে বরফ ক্রয় করে মাছ বাঁচাতে হচ্ছে।

এদিকে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখলেও নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের কাজ চলছে পুরোদমে।

সূত্র জানায়, নতুন সংযোগে কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দালালরা অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় নিয়মিত সংযোগ প্রদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, এর কয়েক মাস আগে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন কোম্পানি লি. (জাইকা) অর্থায়নে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সোর্স লাইনের অপরিকল্পিত কাজ বাস্তবায়নের অজুহাত দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ দিনের বেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ রেখেছিলেন দীর্ঘদিন।

এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কপিলমুনি লাইন ইনচার্জ মো. আসাদের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে তাদের কোন হাত নেই। মূল লাইনে বিদ্যুৎ না থাকলে তারা বিদ্যুৎ দেবেন কোথা থেকে? তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।

এ ব্যাপারে এলাকাবাসী বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।