Sunday, November 24, 2013

বিপর্যয় থেকে চিংড়ি শিল্প রক্ষার উদ্যোগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি

মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে চিংড়ি শিল্পকে রক্ষার কর্তৃপক্ষীয় উদ্যোগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর পুশ প্রথা এখনও অব্যাহত রয়েছে। মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ এবং বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের পাশাপাশি খুলনা চিংড়ি বণিক সমিতি কর্তৃপক্ষ পুশ বিরোধী অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু পুশকৃত মাছ উদ্ধার করে নষ্ট করেছে। পাশাপাশি কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করে মৎস্য বিভাগ।

চিংড়ি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন ও খুলনা চিংড়ি বণিক সমিতির পক্ষ থেকে গত কয়েকদিন ধরে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত চিংড়িকে রক্ষায় ব্যবসায়ীদের সকল প্রকার পুশপ্রথা থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ওই বার্তায় বলা হয়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত চিংড়ির প্রায় একশ’ ভাগই রপ্তানী হয় উন্নত বিশ্বের খাদ্য হিসেবে। বিদেশীরা তাঁদের ল্যাবরেটরীতে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র মানসম্মত চিংড়ি খাদ্য হিসেবে তাঁদের দেশে বাজারজাতকরণের জন্য অনুমোদন দেয়। অতীতে এদেশ থেকে রপ্তানীকৃত চিংড়ির কোন কোন কনসাইনমেন্টের গুণগত মান আশানুরূপ না হওয়ায় ইউরোপ ও আমেরিকায় এদেশের চিংড়ি রপ্তানী প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। যার ফলে ২০০৯ সালের জুন মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ইউরোপে সাময়িকভাবে গলদা চিংড়ি রপ্তানী বন্ধ করতে হয়েছিল।

কিন্তু বহু প্রচেষ্টার পর সরকারী ও বেসরকারীভাবে ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে অনেক দেন দরবার করে উক্ত রপ্তানী আবার চালু করা সম্ভব হয়। এখন মানসম্মত চিংড়ি রপ্তানী করতে পুনরায় ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের চিংড়ি বিদেশে রপ্তানী চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে হ্যাচারী, চিংড়ি চাষ, ফিড মিল, ডিপো ব্যবসায়ী, বরফকল, চিংড়ি পরিবহন ও মাছ রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে এবং দেশের প্রায় এক কোটি লোক বেকার হয়ে পড়বে। আর বন্ধ হয়ে যাবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ।

এসব কারণে এ শিল্পকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতা ও সততার সাথে কিছু নির্দেশনা মেনে চলা উচিত বলেও ওই বার্তায় আহবান জানানো হয়। যার মধ্যে রয়েছে চিংড়ির দেহে পানি, ভাতের মাড়, সাবু, এরারুট, লোহা বা সীসারগুলি, মার্বেল, ম্যাজিকবলসহ অনাকাঙ্খিত পদার্থের দ্বারা পুশ করে চিংড়ির ওজন বাড়িয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের চেষ্টা না করা, রাসায়নিক তরল পদার্থের মধ্যে চিংড়ি ভিজিয়ে রেখে ওজন বাড়াবার চেষ্টা না করা প্রভৃতি। এমনকি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই অপকর্মে লিপ্ত থাকলে তা’ জানামাত্রই সংশ্লিষ্টদের নিকটবর্তী থানা, র‌্যাব, মৎস্য কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরে আনার আহবান জানানো হয় ওই সচেতন বার্তায়।

কর্তৃপক্ষীয় এতসব আয়োজনের পরও থেমে নেই পুশ প্রথা। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু পুশকৃত মাছ নষ্ট করা হয়। তবে এর মাধ্যমে পুশ প্রথা অনেকাংশে কমে গেছে বলেও কর্তৃপক্ষ দাবি করেন।