Thursday, December 12, 2013

ট্রেইলারে বিশুদ্ধ বেদনার অশ্রু এনে দিলো ‘বাস্টার্ড চাইল্ড’

ইতিহাসের নির্মমতা যতোটা কোমল মোড়কেই পরিবেশিত হোক, তার ভয়াবহতার মাত্রা কমে না কিছুতেই। আর তাই পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত চেয়েছেন তার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে যেন পুরোপুরি বাস্তবচিত্রই উঠে আসে সেই সময়ের। ‘বাস্টার্ড চাইল্ড' নামের এই সিনেমা আটকে গেছে ভারতের সেন্সর বোর্ডে নামের জটিলতায়। তবে বিজয়ের মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ট্রেইলারেই তিনি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে সক্ষম হয়েছেন।


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতে এই চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন বাঙালি অভিনেত্রী রাইমা সেন। ছবিটিতে নিজের চরিত্র নিয়ে রাইমা সেনের মন্তব্য, "একাত্তরের যুদ্ধে নির্যাতিত নারীর ব্যথা টের পাচ্ছি।"

এই সিনেমায় তার চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তোলা ছিল সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে কঠিন কাজ। সিনেমাটিতে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের বিপরীতে অভিনয় করেছেন রাইমা। ইন্দ্রনীল এখানে একজন সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

সিনেমাটির গল্প নিয়ে রাইমা সেন বলেন, "এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে বাঙালি নারী ধর্ষণের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা একটি ছবি। সেই সময় ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। চলচ্চিত্রটিতে ফোকাস করা হয়েছে দগ্ধ করা, সহিংসতা, প্রতিরোধসহ এমন ছোট ছোট তিন বা চারটি সমান্তরাল গল্প। সিনেমার শেষের দিকে এসে সবগুলো জীবন একত্র হয়। প্রথম গল্পে, বাংলাদেশের একটি গ্রামে যুদ্ধাবস্থার মধ্যে এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে যাচ্ছিলেন। আরেকজন আছেন সাংবাদিক, তিনি যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। তার স্ত্রী-ই সিনেমাটির মূল চরিত্র। একটি ধর্ষণ ক্যাম্পে আটকে রাখা হয় তাকে। ওই সময়ে বাংলাদেশের মেয়েদের অবস্থা ছিল এমন।"

শুটিং আর নিজের করা চরিত্র নিয়ে রাইমা জানান, "টানা ২১ দিন ধরে পুরো রাত ধরে শুটিং করেছি। দিনের আলো দেখতে পারিনি। ওই সময় তারা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন আমি সেটা অনুভব করছি। আমার চরিত্রটা বেশ কঠিন। একজন ধর্ষিতার শারিরীক ভাষা এবং চোখ দিয়ে সঠিক অবস্থাটিকে ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধে নির্যাতিত নারীর ব্যথা টের পাচ্ছি আমি। কীভাবে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।"

পশ্চিম বাংলা, দিল্লির আশপাশে এবং হরিয়ানায় শুটিং হয়েছে সিনেমাটির। এতে আরো অভিনয় করেছেন ফারুক শেখ, ভিক্টর ব্যানার্জি এবং পবন মালহোত্রা। বাংলাদেশের বিজয় দিবসকে সামনে রেখে ছবিটি মুক্তির কথা থাকলেও ছবির ‘নাম অশ্লীল' এই তকমা দিয়ে সেন্সরে আটকে গেছে মুক্তির তারিখ।

‘বাস্টার্ড চাইল্ড' ছবিটির ট্রেইলার দেখে কেঁপে উঠেছেন দেশের স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষ। এতো বাস্তবরূপে একাত্তরের নির্মমতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, চমকে গেছেন বিদেশীরাও।

নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া দেশপ্রেমের অনুভূতি বাঙ্গালীর ভেতর থেকে বের করে এনেছে এই ছবির ট্রেইলার। মূল ছবি দেখতে প্রচুর মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অপেক্ষায় আছেন কবে মুক্তি পাবেন ছবিটি।