Saturday, April 27, 2013

অভিনব সাহায্য !

“টেলিভিশনে স্বজনদের আহাজারি দেখে আর সহ্য করতে পারলাম না। আমরা ও তো মানুষ। মা-বোন ভাইদের জীবিত বা মৃত উদ্ধার করতে দু’বন্ধু ছুটে আসি সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উদ্ধার কর্মীরা ভিতরে ঢুকতে দেয়নি।

বাড়িতে দু’বন্ধু বলে এসেছি, শেষ মৃত বা জীবিত ব্যক্তিকে জীবনের বিনিময়ে হলেও উদ্ধার করবো। যদি প্রাণ যায় তাহলেও ফিরবো না। কিন্তু ততক্ষণে আমাদের মোবাইলের চার্জ শেষ। অনেক চেষ্টা করেও মোবাইল চার্জ দিতে পারিনি। তখন অনেক চিন্তা করে দু’বন্ধু প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ করে সবার সাহায্যের জন্য মোবাইল চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম।’’

কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ থেকে সাভারে ছুটে আসা ইলেকট্রিক মিস্ত্রী সজিব। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, উদ্ধার কাজ যখন শেষ হবে তখন বাড়ি ফিরবো, না হয় ফিরবো না। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর শত শত ফোন। যখন দু’বন্ধুর ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যায়, তখন ভাবলাম মনে হয় আর সাহায্য করা হবে না।”

তিনি বলেন, “যারা নিহত হয়েছেন তাদের স্বজনদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মোবাইল। কিন্তু অনেকের দেখলাম মোবাইলে চার্জ শেষ হয়ে গেছে। নিহতের দূর-দূরান্তের স্বজনদের অন্তত মোবাইলে মৃত্যুর সংবাদটি দিতেও অনেকেই ঘুরছেন সাভারের রাস্তায়। এ থেকে দু’বন্ধু চিন্তা করলাম, সামান্য হলেও এ দুঃখের ভাগিদার হই।’’

তিনি জানান, “চার্জ দেওয়ার প্রায় তিন হাজার টাকার সরাঞ্জামাদি কিনে অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় গেইটে তারা মোবাইলে ফ্রি চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

আরেক বন্ধু নাছির বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত পাঁচ শতাধিক মোবাইলে ফ্রি চার্জ দিয়েছি। স্বজনহারা মানুষগুলো সামান্য চার্জ দিয়ে অন্তত স্বজনদের এটুকু আশ্বস্ত করতে পারছেন যে, লাশ পাওয়া যাবে।”

এটুকু আশার বাণী শোনানোর জন্য হলেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যতদিন অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় লাশ ও স্বজনহারাদের আনাগোনা থাকবে ততদিন এ কাজ করে যাবে বলেও তিনি জানান।

লাশ আসছে লাশ যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ খাবার, পানিসহ অন্যান্য জিনিস দিয়ে স্বজনহারাদের অন্তত শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। নাছির, সজিবের মতো শত শত মানুষ যে যেভাবে পারছেন সাহায্য করছেন অসহায় মানুষগুলোকে।

কিন্তু এত সাহায্য, এত করুণার পর কি স্বজনরা তাদের প্রিয়জনকে খুঁজে পাবে? বিচার হবে কি সেই নর পিশাচদের? শেষ হবে কি এ ন্যাক্কারজনক অধ্যায়ের? এমন প্রশ্ন এখন শুধু অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আসা স্বজনদের নয়, সারাদেশের মানুষের।