Monday, January 20, 2014

পাইকগাছায় অস্থায়ী বেদে পল্লীতে এক বিকেল !

পৌরসভার পুরাতন ব্রীজের সাথে ভিলেজ পাইকগাছার সংযোগ সড়কের পাশে পতিত জমিতে ১১টি অস্থায়ী ঝুপড়ি ঘর নির্মান করে গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ অবস্থান করছে কিছু সংখ্যক বেদে পরিবার।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে কথা হয় এই বেদে দলের সর্দার মোহম্মদ আলী‘র সাথে। তিনি জানান, এই বেদে দলটির সব পরিবারগুলির অপেক্ষাকৃত স্থায়ী ঠিকানা মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর। তারা আরও কিছুদিন এখানে অবস্থান করবে, তারপর চলে যাবে অন্য কোথাও।

মাটিতেই চাটাই বিছিয়ে পলিথিন কাগজের ছাউনি দিয়ে তৈরি হয়েছে তাদের ঘরগুলো। একটি ঝুপড়ি ঘরেই মাথা গুঁজতে হয় পরিবারের সাত-আট জনকে।

তাদের পরিবারের মেয়েরাই বেশি অর্থ উপার্জন করে থাকে। মেয়েরা সকাল হলেই মাথাই ঝুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে দূরের গ্রামগুলোয় রোজগারের আশায়। পুরুষেরা ঘরে বসে সারা দিন ছোট ছেলেমেয়েদের দেখে শুনে রাখে। এ পল্লীতে মেয়েদেরও জীর্ণ শরীর প্রমাণ করে এখানে বাল্যবিবাহ ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের কোনো বালাই নেই। তাদের পরিবারগুলোতে রয়েছে একের অধিক ছেলেমেয়ে।

এক বেদেনী জানান, এখন গ্রামাঞ্চলে খুব একটা পয়সা পাওয়া যায় না। পুরুষেরা যে একেবারে বসে থাকে তা নয়। তারাও মাঝে মধ্যে দূরের গ্রামগুলোতে বের হয় জীবিকার সন্ধানে। তাদের সাথে থাকে সাপের ঝাঁপি ও বানর। সারাদিন সাপ ও বানরের খেলা দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে পয়সা রোজগার করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে। পুরুষদের মধ্যে আবার কেউ কেউ সাপ ধরে বিক্রি করে।

বেদে সর্দার মোহম্মদ আলী জানান, সাপ ধরা কাজটা অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ জেনেও পেটের দায়ে তা করতে হয়। অনেক সাপুড়ে সাপ ধরতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের ছোবলে মারা গেছে। বর্ষার মৌসুমে বেশি সাপ ধরা যায়। একটি মাঝারি কুলিন (জাত) সাপ ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।

একাধিক বেদে জানান, শীত মৌসুমে তারা পুটলা পুটলি বেধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের পরিবারসহ বেরিয়ে পড়েন রোজগারের আশায়। এক এলাকাতে কিছুদিন পয়সা রোজগার করে আবার চলে যান অন্য এলাকায়। এভাবে সারা বছর কিছু পয়সা জমিয়ে বর্ষার শুরুতে অপেক্ষাকৃত স্থায়ী ঠিকানা বিক্রমপুরে ফিরে আসেন।

তারা আরও জানান, পূর্বে তারা গ্রামাঞ্চলে গেলে যেভাবে পয়সা পেতেন এখন আর পাননা। কারণ জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির জন্য গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে যথেষ্ট পয়সা থাকে না। তাই বেদেরাও তাদের পেশা পরিবর্তন করতে শুরু করেছে।

বেদে ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার দিকে পশ্চাৎবর্তী। জীবিকা উপার্জনের জন্য পরিবারের সাথে বছরে ১০ মাসই এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে হয়। সে জন্য তাদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে ওঠে না।