Thursday, April 24, 2014

পাইকগাছা-আঠার মাইল সড়কের বেহাল দশায় জনভোগান্তি চরমে

সংস্কার কাজ শুরু হলেও বর্ষার আগে শেষ না হবার আশংকা


বহু প্রতিক্ষার পর অবশেষে শুরু হয়েছে পাইকগাছা-আঠার মাইল প্রধান সড়কের সংস্কার কাজ। তবে ঠিকাদারদের অপরিকল্পিত আয়োজনে শম্ভুক গতির কার্যক্রমে বর্ষার আগে কাজ শেষ না হওয়ায়র আশংকা দেখা দিয়েছে শুরুতেই। ঠিকাদার প্রথমেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে দু’পাশে মাটি দিয়ে উঁচু করে রাখায় সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। অল্প বৃষ্টিতেই সড়কে বন্ধ হয়ে যেতে পারে নির্মাণ কাজসহ সকল প্রকার যান চলাচল।

বর্ষা মৌসুমের আগে পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়কের আঠার মাইল থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা’সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের একমাত্র এ সড়কটি দীর্ঘদিন যাবৎ চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। তারপরও প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি দিয়ে চলাচল করছে শত শত বাস, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রো, প্রাইভেট, নসিমন, করিমন, মটরসাইকেল, ভ্যানসহ বিভিন্ন পরিবহন। কয়েক মাস পূর্বেই বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। 

প্রথম থেকেই Voice of Paikgacha এই সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে সরব ভূমিকা পালন করে আসছে। সড়কটি সংস্কারে এলাকাবাসী মানববন্ধন সহ ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রামও করেছিল। এক পর্যায়ে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে সরকার সম্প্রতি শুরু করেছে সড়কের সংস্কার কাজ। তবে রাস্তার দু’পাশে দেড় থেকে দুই ফুট মাটি দিয়ে উঁচু করে রাখায় বর্তমানে জনভোগান্তি আরো বহুগুণে বেড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড দাবদাহে পাশাপাশি রাস্তা দিয়ে যেকোন গাড়ি গেলেই পাশের মাটি-বালি উড়ে পথচারীদের পথ চলতে ব্যাপক দূর্ভোগের সৃষ্টি করছে। সড়কের পার্শ্ববর্তী বসতিদেরও যেন সমস্যার অন্ত নেই। প্রতিনিয়ত ছোট খাটো সড়ক দূর্ঘটনার পাশাপাশি সর্দি-কাশি-এলার্জি জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ভূক্তভোগিরা।

প্রসঙ্গত, খুলনার কয়রা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা’সহ সাতক্ষীরার তালা, আশাশুনির একাংশের মানুষের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচলের প্রধান এবং একমাত্র সড়কটি দীর্ঘদিন যাবৎ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও প্রতি বছর সংস্কারের নামে সড়কে কিছু খোয়া ও পিচ ছাড়া কিছুই জোটে না।

গত কয়েকবছর যাবৎ কপোতাক্ষের অব্যাহত নাব্যতা হ্রাসে জোয়ার ভাটা মরে যাওয়ায় পানি নিস্কাশনের পথ বিলুপ্ত হয়ে অতি বৃষ্টি ও উজানের পানিতে নদী উপকূলীয় বিস্তৃর্ণ এলাকায় বছরের প্রায় সিংহভাগ সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এতে এলাকার বিস্তৃর্ণ ফসলের ক্ষেত, পানের বরজ, চিংড়ি ঘের, বসতবাড়ী তলিয়ে যায়। একই সময় পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়কের তালা থেকে কাশিমনগর পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তাও তলিয়ে যায়। সে সময় বিচ্ছিন্ন থাকে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এরপর পানি সরে গেলেও কোন প্রকার মেরামত হয়নি সড়কের কোন অংশই।

এক পর্যায়ে জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে গত বছরের প্রথম দিকে সড়কের আঠার মাইল থেকে কয়রার চাঁদআলী পর্যন্ত প্রায় ৫২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ হয় প্রায় ১৬ কোটি টাকা। তবে উপকরণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির ফলে ঠিকাদার কপিলমুনির-সলুয়া পর্যন্ত রাস্তার সিলকোডের কাজ সম্পন্ন করে চলে যায়।

এরপর নতুন করে আঠারমাইল থেকে তালা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা ৫ কিলোমিটার করে দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে যথাক্রমে ৬৩/৬৪ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া সলুয়া থেকে কাশিমনগর পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৮৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ায় আগেই রাস্তাটি ফিরে যায় পূর্বের অবস্থায়।

এরপর সম্প্রতি নতুন টেন্ডারে কাজ শুরু হলেও অব্যবস্থাপনা ও শম্ভুক গতিতে মনে হচ্ছে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে কোন ভাবেই কাজ শেষ করা সম্ভব না। আর এমনটি হলে এবার রাস্তায় রীতিমত জলাবদ্ধতার পাশপাশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এলাকাবাসী অতিদ্রুত সুষ্ঠ ভাবে কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।