Friday, September 19, 2014

তিন জেলাবাসীর দুর্ভোগের নাম তালা-পাইকগাছা সড়ক

সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা— এ তিন জেলার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের আরেক নাম তালা-পাইকগাছা সড়ক। সাতক্ষীরা সদর, তালা, পাটকেলঘাটা; খুলনা জেলার পাইকগাছা, কয়রা, দাকোপ; যশোর জেলার কেশবপুর ও মনিরামপুরসহ তিন জেলার আট উপজেলার মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে এ সড়ক ব্যবহার করে। এর বাইরে যশোরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র নওয়াপাড়া যেতে-আসতে সড়কটির ব্যবহার লাগে। 


ব্যস্ত সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ এবং কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করলেও এর উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সবসময়ই উদাসীন। সড়কটি সাতক্ষীরা এবং খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে হওয়ায় দুই জেলার সওজ কর্তৃপক্ষের রশি টানাটানিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয় আট উপজেলা ও এক বাণিজ্যিক এলাকার সব শ্রেণীর মানুষকে।

দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে রাস্তাটি বর্তমানে একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী। বিশেষ করে সাতক্ষীরার তালা সদর থেকে ১৮ মাইল বেতাগ্রাম এবং বিপরীত দিকে কপিলমুনি থেকে তালা সদর পর্যন্ত রাস্তাটি বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে একাকার হয়ে গেছে।

সড়কটির কোনো কোনো অংশ দেখে পুকুর বলেই ভ্রম হবে। এর ওপর দিয়েই শত শত যানবাহন চলাচল করে দুলকি চালে। যাত্রার মাঝপথে যানবাহন বিকল হয়ে যাওয়া নৈমিত্তিক ব্যাপার। সড়কের মাঝখানে হঠাৎ বিকল হয়ে যাওয়া যানবাহন থেকে নামতে আরেক ঝক্কি। জল-কাদায় মাখামাখি হয়েই খুঁজতে হয় বিকল্প যানবাহন।

পাইকগাছা-তালা সড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের চালক মুনছুর আলী বলেন, সড়কের ১৮ মাইল বেতাগ্রাম থেকে তালা সদর পর্যন্ত এ ১০ কিলোমিটার রাস্তা এতই খারাপ যে, বাস চালানোর সময় স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। সড়কের করুণ দশার জন্য বাস চালাতে হয় ধীরগতিতে। ফলে দুর্ঘটনা তেমন একটা ঘটে না।

সাতক্ষীরা এবং খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তালা সদর থেকে কপিলমুনি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটিএমই ঢাকা ও জেভি বাগেরহাট যৌথভাবে এর সংস্কারকাজ পায়। কিন্তু কাজের ধীরগতির জন্য চলে আসে বর্ষা মৌসুম। ফলে কাজ আবার বন্ধ হয়ে যায়। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা দাবি করছেন, ১০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটারের কার্পেটিং শেষ হয়ে গেছে। বাকি সাড়ে তিন কিলোমিটারের কার্পেটিং বর্ষা শেষ হলেই শুরু হবে।

সড়কে চলাচলকারী মানুষের অভিযোগ, গত অর্থবছরে শুরু হওয়া তালা সদর-কপিলমুনি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের কাজ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। একদিন কাজ চলে তো তিনদিন বন্ধ। কোনো সময় পুরোদমে কাজ চলে আবার কোনো সময় কাজের নাম-নিশানাও থাকে না।

রোবেল হোসেন নামে একজন স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সওজের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা পরিদর্শনে এলেই কাজের তোড়জোড় শুরু হয়। পরিদর্শন শেষে ব্যস্ততম সড়কটির সংস্কারকাজ থেমে যায়।

এদিকে খুলনা পাইকগাছা সড়কের ১৮ মাইল বেতাগ্রাম থেকে তালা সদর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য ৮ সেপ্টেম্বর ১৩ কোটি টাকার একটি টেন্ডার আহ্বান হয়েছে বলে জানা গেছে। বর্ষা মৌসুম শেষে কাজ শুরু হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. অলিউল্লাহ জানান, তালা সদর থেকে কপিলমুনি পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের কাজ গত অর্থবছরের টেন্ডার অনুযায়ী চলমান রয়েছে এবং তালা থেকে ১৮ মাইল বা বেতাগ্রাম পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারকাজের জন্য ১৩ কোটি টাকার একটি টেন্ডার ৮ সেপ্টেম্বর আহ্বান করা হয়েছে। সাতক্ষীরার তালা ও খুলনার কপিলমুনি-পাইকগাছা সড়কে চলাচলরত জনসাধারণের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে রাস্তা সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।