Monday, July 1, 2013

লবণ পানির দাপটে ভাল নেই পাইকগাছা-কয়রার মানুষ

সুন্দরবন ঘেঁষে অবস্থিত পাইকগাছা-কয়রা অঞ্চলের অধিবাসীরা ভাল নেই। জলবায়ু পরিবর্তন ও লোনা পানির দাপটে প্রতিনিয়ত তারা রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে। অভাব-অনটন জেঁকে বসেছে তাদের পরিবারে। আজও তারা আইলা বা সিডরের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

আগামীতে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা করছে বিশেজ্ঞরা। আর এর অন্যতম কারণ প্রাকৃতিক সমারোহের বিলুপ্তি ঘটিয়ে কৃষি জমিতে অবাধে লোনা পানি তুলে চিংড়ির চাষ। ফলে এখানকার অধিবাসীদের জীবনচিত্রের সাথে সাথে এখানকার ভৌগলিক চিত্রও পাল্টে গেছে। নেই কৃষি জমি। এতে করে দেখা দিয়েছে গো খাদ্যের তীব্র সংকট। অথচ ৮০ দশকের সময় পাইকগাছা-কয়রায় ঘরে ঘরে পালন করা হতো গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন পশু-পাখি। আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল প্রতিটি ঘরে। তাদের সন্তানরাও থাকতো দুধে-ভাতে।

কিন্তু চিংড়ি চাষের এই দাপটে হারিয়ে গেছে সেই দৃশ্যপট। নেই কৃষাণ-কিষাণীর ধান কাটাসহ ধান মাড়াই ইত্যাদির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এখন আর হয় না কোন নবান্নের উৎসব। ধুম পড়ে না পৌষের পিঠাপুলি তৈরির ব্যস্ততার। এদের জোটে না দুবেলা দুমুঠো ভাত।

৯০ দশকের পর থেকে এ অঞ্চলে ওয়াপদার ভেড়িবাঁধ কেটে অবাধে লোনা পানি ঢুকিয়ে শুরু হয় প্রভাবশালীদের একের পর এক চিংড়ি চাষ। এলাকার মানুষ প্রতিবাদ মুখর হলেও এদের অবৈধ অর্থের দাপটে তারা বড় অসহায়। প্রতিবাদী গৃহবধূ করুণাময়ী সরদার হত্যা ঘটনা ঢামাচাপা পড়ে গেছে। ওয়াপদার বাঁধ কাটার কারণে আইলা ও সিডরের প্রচন্ডতায় বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। ভেঙে যায় ঘরবাড়ি, গৃহহারা হয়ে পড়ে মানুষ। তাদের জীবনে নেমে আসে এক অবর্ণনীয় কষ্ট। আজও তারা সেই কষ্ট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ হলেও সেই টাকা হয়েছে হরিলুট। আবারও পাউবো এর একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে ভেড়িবাঁধ কেটে লোনা পানি তোলার মহোৎসব শুরু হয়। ফলে আগামীতে আইলা বা সিডরের মত কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে এ এলাকায় ঘটতে পারে ব্যাপক প্রাণহানী।