কয়রা দক্ষিণ খুলনার এক বর্ধিষ্ণু অঞ্চল।
ঘূর্ণিঝড় আইলাবিধ্বস্ত এই জনপদ জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে
ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানকার পরিবেশে এখনো আইলার হিংস্র
ছোবলের চিহ্ন বিদ্যমান। এক সময়ের চিরসবুজ প্রকৃতি এখনও রুক্ষ। প্রাণের অস্তিত্বে নিষ্প্রাণ ছন্দ।
জীবন-জীবিকায় অন্তহীন সংকট-দুর্দশা। অনাদিকাল হতেই প্রকৃতির সীমাহীন
বৈরিতায় এখানকার মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন বারেবারেই লন্ডভন্ড হয়,
ছিন্নভিন্ন হয়। তারপরেও এখানকার সংগ্রামী জীবন জেগে ওঠে। কন্টকময় পথেও
জীবনচাকা বহমান হয়। প্রকৃতির রুদ্ররোষেও জীবনছন্দ টিকে আছে।
এই জনপদের দুঃখ নিরাপদ বা সুপেয় পানি। সুপেয় পানির অজন্ম সংকট এই জনপদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সমুদ্রঘনিষ্ট উপকূলীয় এই জনপদের মানুষের কাছে নলকূপের পানি স্বপ্নের মত। এই জনপদে নলকূপ কার্যকরী নয়। ভূ-গর্ভে-ভূপৃষ্টে-নদীতে-খালে সব জায়গায়ই লবণ পানি। মিষ্টি পানি এখানে অমৃতসম। এখানকার মানুষ সাধারণত বৃষ্টি এবং পুকুরের পানি পান করে। বছরের কয়েকমাস বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা’ পান করে। বৃষ্টির পানি শেষ হলে পান করে পুকুরের পানি। পুকুরের পানিও খুব সীমিত। কয়েকটি মাত্র মিষ্টি পানির পুকুর রয়েছে এই জনপদে। তাই পানি সংগ্রহ করতে হয় ৫-১০-১৫ কিলোমিটার দূর হতে। একটি সময় পুকুরের পানিও শেষ হয়ে যায়। তখন শুরু হয় পানির জন্য হাহাকার। অবস্থাপন্ন অল্প কিছু পরিবার তখন উচ্চমূল্যে পানি কিনে খায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে নদীর লবণ পানিই তখন একমাত্র অবলস্বন। ঋতুচক্রের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত নদীর লবণ কিংবা পুকুরের দূষিত পানিতেই তাদের তৃষ্ণা নিরারণ করতে হয়।
পানির অপর নাম জীবন। পানি মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন। মানুষের জীবনচক্রে সুপেয় পানির বিকল্প নেই। সুস্থ্য, সুন্দর এবং সাবলীলভাবে বেড়ে ওঠায় পানি প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের মানুষের কাছে এক ফোটা সুপেয় পানি যেন আজন্ম এক সাধনার নাম। এখানে একটি শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর হতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পানিকষ্টে ভোগে। এটিই এখানকার বাস্তবতা। এই কঠিন বাস্তবতার যন্ত্রনা ছিন্ন করে তীব্র পানি সংকটের এই ইউনিয়নে সুপেয় পানির এক নতুন উৎসের সন্ধান পেয়েছে এই জনপদের মানুষ।
স্থানীয় জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ওয়াটার-এইড এবং রূপান্তরের সহায়তায় তারা এখানে বাস্তবায়ন করেছে অতি প্রাচীন এক পদ্ধতির- যা ‘পাতকুয়া’ নামে পরিচিত। ‘পাতকুয়া’ নাম হলেও এটি সনাতনী ‘পাত কুয়া’ নয় বরং বিশেষ পদ্ধতির ভূগর্ভস্থ পানির আধার বিশেষ। এই পাত কুয়া থেকে স্বচ্ছ এবং সকল প্রাকৃতিক খনিজ গুণসম্পন্ন সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে। এ যেন লবণের গহ্ববরে অমৃত ফোটা। স্থানীয় জ্ঞানের সাথে কারিগরি জ্ঞানের সংমিশ্রণে তৈরী সাশ্রয়ী মূল্যের এই পাতকুয়া বা রিংওয়েল সুপেয় পানির তীব্র সংকটের কয়রার মহেশ্বরীপুর জনপদের জন্য এক আশির্বাদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। মাত্র ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ের এই পাত কুয়াটি প্রায় ২০০ মানুষের সারা বছরের নিরাপদ পানি সংস্থানের বিশ্বস্ত উৎস হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে গঠিত একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি নিজস্ব অর্থে পাত কুয়াটি দেখভাল এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে বলে এটি এখন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রাণের সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
লবণপ্রভাবিত মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের পাতকুয়ার এই সাফল্যকে বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত জনপ্রিয় এই প্রযুক্তি দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি পানির দুঃপ্রাপ্যতা অনেকাংশেই লাঘব করতে সক্ষম হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকির বিপরীতে উল্লিখিত মডেলের পাত কুয়া কয়রার মত তীব্র লবণবেষ্টিত অঞ্চলের মধ্যেও মিষ্টি পানির উৎস হিসেবে খুবই টেকসহ ও লাগসহ প্রযুক্তি হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
এই জনপদের দুঃখ নিরাপদ বা সুপেয় পানি। সুপেয় পানির অজন্ম সংকট এই জনপদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সমুদ্রঘনিষ্ট উপকূলীয় এই জনপদের মানুষের কাছে নলকূপের পানি স্বপ্নের মত। এই জনপদে নলকূপ কার্যকরী নয়। ভূ-গর্ভে-ভূপৃষ্টে-নদীতে-খালে সব জায়গায়ই লবণ পানি। মিষ্টি পানি এখানে অমৃতসম। এখানকার মানুষ সাধারণত বৃষ্টি এবং পুকুরের পানি পান করে। বছরের কয়েকমাস বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা’ পান করে। বৃষ্টির পানি শেষ হলে পান করে পুকুরের পানি। পুকুরের পানিও খুব সীমিত। কয়েকটি মাত্র মিষ্টি পানির পুকুর রয়েছে এই জনপদে। তাই পানি সংগ্রহ করতে হয় ৫-১০-১৫ কিলোমিটার দূর হতে। একটি সময় পুকুরের পানিও শেষ হয়ে যায়। তখন শুরু হয় পানির জন্য হাহাকার। অবস্থাপন্ন অল্প কিছু পরিবার তখন উচ্চমূল্যে পানি কিনে খায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে নদীর লবণ পানিই তখন একমাত্র অবলস্বন। ঋতুচক্রের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত নদীর লবণ কিংবা পুকুরের দূষিত পানিতেই তাদের তৃষ্ণা নিরারণ করতে হয়।
পানির অপর নাম জীবন। পানি মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন। মানুষের জীবনচক্রে সুপেয় পানির বিকল্প নেই। সুস্থ্য, সুন্দর এবং সাবলীলভাবে বেড়ে ওঠায় পানি প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের মানুষের কাছে এক ফোটা সুপেয় পানি যেন আজন্ম এক সাধনার নাম। এখানে একটি শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর হতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পানিকষ্টে ভোগে। এটিই এখানকার বাস্তবতা। এই কঠিন বাস্তবতার যন্ত্রনা ছিন্ন করে তীব্র পানি সংকটের এই ইউনিয়নে সুপেয় পানির এক নতুন উৎসের সন্ধান পেয়েছে এই জনপদের মানুষ।
স্থানীয় জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ওয়াটার-এইড এবং রূপান্তরের সহায়তায় তারা এখানে বাস্তবায়ন করেছে অতি প্রাচীন এক পদ্ধতির- যা ‘পাতকুয়া’ নামে পরিচিত। ‘পাতকুয়া’ নাম হলেও এটি সনাতনী ‘পাত কুয়া’ নয় বরং বিশেষ পদ্ধতির ভূগর্ভস্থ পানির আধার বিশেষ। এই পাত কুয়া থেকে স্বচ্ছ এবং সকল প্রাকৃতিক খনিজ গুণসম্পন্ন সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে। এ যেন লবণের গহ্ববরে অমৃত ফোটা। স্থানীয় জ্ঞানের সাথে কারিগরি জ্ঞানের সংমিশ্রণে তৈরী সাশ্রয়ী মূল্যের এই পাতকুয়া বা রিংওয়েল সুপেয় পানির তীব্র সংকটের কয়রার মহেশ্বরীপুর জনপদের জন্য এক আশির্বাদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। মাত্র ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ের এই পাত কুয়াটি প্রায় ২০০ মানুষের সারা বছরের নিরাপদ পানি সংস্থানের বিশ্বস্ত উৎস হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে গঠিত একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি নিজস্ব অর্থে পাত কুয়াটি দেখভাল এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে বলে এটি এখন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রাণের সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
লবণপ্রভাবিত মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের পাতকুয়ার এই সাফল্যকে বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত জনপ্রিয় এই প্রযুক্তি দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি পানির দুঃপ্রাপ্যতা অনেকাংশেই লাঘব করতে সক্ষম হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকির বিপরীতে উল্লিখিত মডেলের পাত কুয়া কয়রার মত তীব্র লবণবেষ্টিত অঞ্চলের মধ্যেও মিষ্টি পানির উৎস হিসেবে খুবই টেকসহ ও লাগসহ প্রযুক্তি হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।