Monday, May 5, 2014

প্রভাবশালীর নিষ্ঠুর সেচ্ছাচারিতায় পানিবঞ্চিত কয়রার ৫০ পরিবার

আইলা কবলিত কয়রা উপজেলার পল্লিতে প্রায় শতাধীক মানুষের এক মাত্র খাবার পানির উৎস জোর পূর্বক তুলে নিলেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বেলা ১০টায় উপজেলার দূর্গম জনপদ দক্ষিনবেদকাশী গ্রামের হলুদবুনিয়া গ্রামে।

সরেজমিন রোববার এলাকাটিতে গেলে, সেখানে সাংবাদিকদের উপস্তিতি জানতে পেরে মুহূর্তের মধ্যে জড়ো হয়ে গেলেন গ্রামের শতাধীক নারি, পুরুষ, বৃদ্ধ। তাদের একটাই আকুতি, "আমাদের কি অপরাধ ? দুই ভাইয়ের পারিবারিক কলহের কারনে সরকারের দেওয়া খাবার পানির কলটি অকেজো করে দিয়ে পানি বঞ্চিত করা হল আমাদের।"

গ্রামবাসী জানান, গ্রামটিতে পানির তীব্র সংকট বিবেচনা করে দুর্গম এলাকাটিতে ২০০৮ সালে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর হলুদবুনিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলামের বাড়ীতে একটি গভীর নলকুপ স্থাপন করে। সে মোতাবেক টিউবয়েলটি থেকে এলাকার লোকজন খাবার ও গোছলের পানিসহ নিত্যব্যবহার্য পানির চাহিদা পুরন করতো।

কিন্ত বেশ কিছুদিন যাবৎ নজরুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই মিরজাকুল ইসলামের মধ্যে পারিবারিক কলহের কারনে মাঝে মাঝে কলটি জোর পূর্বক বন্ধ করে রাখা হত। পানির সংকট সইতে না পেরে কয়েক দিন আগে মিরজাকুেলর সহযোগিতায় গ্রামবাসীরা মিলে নলকুপটি সংষ্কার করে পুনরায় ব্যবহার করে আসছিল।

হটাৎ শনিবার সকালে নজরুল ইসলাম ও তার পুত্র দক্ষিনবেদকাশী ইউনিয়ন হেলথ ইন্সপেকটর কোহিনুর ইসলাম কয়েকজন লোক নিয়ে জোর পুর্বক মাটি খুঁড়ে টিউবয়েলটির মুল পাইপের উপরের অংশ ভেঙে দিয়ে মাটির গভীরে থাকা পাইপের ভিতরে ইটের খোয়া ও বালুসহ ময়লা আবর্জনা ভরে টিউবয়েলটি অকেজো করে দেন।

এ সময় সেখানে উপস্থিত কয়েক গ্রামবাসী ও মিরজাকুলের স্ত্রী টিউবয়েলটি নষ্ট না করার জন্য তাদের অনুরোধ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে গালি গালাজ করে টিউবয়েলটি অকেজো করে বীর দর্পে চলে যান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিনবেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, সরকারি টিউবয়েলটি নষ্ট করা তাদের ঠিক হয়নি। বিষয়টি গ্রামবাসী আমাকে জানালে তাদেরকে আইনের আশ্রয় গ্রহনের পরামর্শ দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। সরকার লক্ষ টাকা খরচ করে এ দুর্গম এলাকার গ্রামটির মানুষের সুপেয় পানির অভাব পুরনের জন্য টিউবয়েলটি স্থাপন করলেন। দু’ভাইয়ের রেষারেষির কারনে এক ভাই প্রভাব খাটিয়ে জোর পুর্বক পানির কলটি নষ্ট করে দিয়ে গ্রামবাসীকে পানি বঞ্চিত করলেন। এ ধরনের কর্মকান্ড মেনে নেওয়া যায়না। দোষীদের বিচার হওয়া উচিৎ।

টিউবয়েল নষ্টকারি নজরুল মাষ্টারের ৮০ বছর বয়সের বৃদ্ধা মাতা রূপবান বিবি আক্ষেপ করে বলেন, "আমি মা হয়ে কলটি নষ্ট করার সময় আমার ছেলে ও তার পুত্রকে পা ধরে অনুরোধ করেছি গ্রামবাসীর এ ক্ষতি তোরা করিসনা। আমার ছেলে, আমার ও গ্রামের মানুষের কোন অনুরোধ না রেখে কলটি নষ্ট করে দিল।"

হলুদবুনিয়া গ্রামের লিয়াকাত হোসেন মফিজ গাজীসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, মাষ্টার পরিবারটি প্রভাব শালী হওয়ায় গায়ের জোরে কলটি নষ্ট করেছে আমরা এর বিচার চাই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউনিয়ন হেলথ ইন্সপেক্টর কোহিনুর টিউবয়েলটি নষ্ট করার কথা স্বীকার করে বলে,ন সরকারি হলেও টিইবয়েলটি আমাদের টাকা দিয়ে বসানো তাই আমরা নষ্ট করেছি।